Tuesday 3 July 2018

আমার রবীন্দ্রনাথ - দ্বিতীয় পর্ব

আমাদের প্রাইমারী স্কুলের পাঠ্য বইয়ে রবীন্দ্রনাথের গল্পসল্প থেকে একটা গল্প ছিল - দাঁড় ও পাল। মূল গল্প 'বড় খবর'-এর প্রথমাংশটা।   তখন সেই সময় গল্পটা আমার বেশ মজার লেগেছিল। মানে ছোটবেলায় আমার ভাল লাগা রবীন্দ্রনাথের একমাত্র গল্প বলা যায়। তখন অবশ্য গল্পটার আভ্যন্তরিন অর্থ বুঝিনি। বাবা বলেছিলেন গল্পটা নাকি দারুণ। আমি অতশত বুঝিনি ভাল লেগেছিল ব্যাস। আমার দাঁড় ও পালের মধ্যে ঝগড়াটা বেশ মজার লেগেছিল।

রবীন্দ্রনাথের গল্প প্রথম উপলব্ধি করি হাই স্কুলে উঠে। আমাদের প্রধান পাঠ্য বইয়ের সাথে একটা করে সহায়ক পাঠ বই থাকত। তো সেই সহায়ক পাঠেই 'ছুটি' গল্পটা ছিল। আর গল্পে ফটিকের বয়স আমাদের তখনকার বয়সের মতোই। এই বয়স শৈশব ও যৌবনের মাঝামাঝি পর্যায়। ওই সময়ের অবস্থাকে এত সুন্দর করে যেন কেউ আর বলেনি। পড়লেই মনে হত আরে এতো আমারও কথা।

"তেরো-চৌদ্দ বৎসরের ছেলের মতো পৃথিবীতে এমন বালাই আর নাই । শোভাও নাই, কোনো কাজেও লাগে না । স্নেহও উদ্রেক করে না, তাহার সঙ্গসুখও বিশেষ প্রার্থনীয় নহে । তাহার মুখে আধো-আধো কথা ও ন্যাকামি, পাকা কথাও জ্যাঠামি এবং কথামাত্রই প্ৰগলভতা ......... তাহার শৈশবের লালিত্য এবং কণ্ঠস্বরের মিষ্টতা সহসা চলিয়া যায় ; লোকে সেজন্য তাহাকে মনে মৰ্মে অপরাধ না দিয়া থাকিতে পারে না। শৈশব এবং যৌবনের অনেক দোষ মাপ করা যায়, কিন্তু এই সময়ের কোনো স্বাভাবিক অনিবাৰ্য ক্রটিও যেন অসহ বোধ হয় ............  এই বয়সেই স্নেহের জন্য কিঞ্চিৎ অতিরিক্ত কাতরতা মনে জন্মায়। এই সময়ে যদি সে কোনো সহৃদয় ব্যক্তির নিকট হইতে স্নেহ কিম্বা সখ্য লাভ করিতে পারে তবে তাহার নিকট আত্মবিক্রীত হইয়া থাকে। কিন্তু তাহাকে স্নেহ করিতে কেহ সাহস করে না ; কারণ সেটি সাধারণে প্রশ্রয় বলিয়া মনে করে । "

মনে হয়েছিল, সত্যি তো এভাবে কেউ আমার জন্য কোনদিন বলেনি তো। কোথাও একটা মনের ভিতরে রবীন্দ্রনাথ জায়গা করে নিলেন, মনে হল এ বড় আপনার জন, এ আমার রবীন্দ্রনাথ।  আর কারও নয়। যে কথা কাউকে বলা যায়না, তিনিই যেন বলে দিয়েছেন সে কথা। আমাকে মুখ ফুটে অনুযোগ করতে হয়নি। সবচেয়ে মনে ধরেছিল এই কথাটা -  "এই বয়সে সাধারণত নারীজাতিকে কোনো-এক শ্রেষ্ঠ স্বৰ্গলোকের দুর্লভ জীব বলিয়া মনে ধারণা হইতে আরম্ভ হয়, অতএব তাহাদের নিকট হইতে উপেক্ষা অত্যস্ত দুঃসহ বোধ হয়।"   মোক্ষম লেগেছিল এই জায়গাটা।

পরে ভেবে দেখেছি কিশোর সাহিত্য অনেকে লিখেছেন। হয়তো আরও লিখবেন, কিন্তু এভাবে একটি কিশোরের মনোভাব তুলে ধরতে। অন্যরা কিশোরদের জন্য লেখা বলতে হয়  রহস্য রোমাঞ্চ বুঝেছেন না হলে 'হও ধরমেতে বীর'-মার্কা গল্প।  কিন্তু কিশোররা কি চায় তা বুঝতে চাননি। কিন্তু তিনি বুঝেছিলেন, তাই তো তিনি রবীন্দ্রনাথ। হয়তো আজ - রবীন্দ্রনাথকে কেন ভাল লাগে - জিজ্ঞেস করলে বলব অন্য কোন কারন, কিন্তু সেই সময় জিজ্ঞেস করলে বলতাম 'ছুটি'।
সেই সময়ের পর থেকে রবীন্দ্রনাথের সাথে এক অভেদ্য সম্পর্কে যেন জড়িয়ে পড়ি। তারপর থেকে যেখানে আর কোন ভাঙ্গন ধরেনি।





 আমার রবীন্দ্রনাথ - প্রথম পর্বের লিঙ্ক

2 comments:

  1. খাসা হচ্ছে,চালিয়ে যা ভাই।

    ReplyDelete