Friday 1 November 2019

লুকোনো থাকা প্রতিভাগুলো

কদিন আগে আমার এক বন্ধুর সাথে আমার জোর তর্ক হচ্ছিল, প্রতিভা বলে কি কিছু হয়? যার জোরে কোন লোক সাধারণ থেকে অসাধারণ হয়ে ওঠে। না কি পুরোটাই নিয়মনিষ্ঠ অনুশীলনের ফলে? আমার মত ছিল ট্যালেন্ট বলে কিছু আছে, যার মাধ্যমে কোন কাজে কেউ অনায়াসে নিপুণ হযে ওঠে, আর যার তা নেই, সে নিপুণ হয়ে উঠে কঠিন আয়াসে। তো সে বির্তক সময়ের অভাবে সম্পূর্ণ হয়নি। তাই দুজনের মনের ভাব ও পুরোটা প্রকাশ হয়নি, তো কোন কনক্লুশনেও আসতে পারিনি।
আসলে সময়ের অভাবে এরম অনেক আপাত অদরকারী অথচ মূল্যবান বিতর্ক বা আলোচনা থেমে যায়। তেমনই এই দৌড়ে অনেকের সুপ্ত প্রতিভা চাপা পড়ে যায় বা টিমটিম করে জীবনের কোন খুব নরম কোনে, খুব যত্ন করে কেউ বাঁচিয়ে রাখে সেই প্রতিভার ছটাকে। তার বিচ্ছুরিত আলোর প্রকাশ মাঝে মধ্যে দেখি তাদের সাজানো নোটবুকে, হোয়াটস্যাপ স্ট্যাটাসে বা ঘরোয়া অনুষ্ঠানের মঞ্চে। অনেক ক্ষেত্রে দেখি সেই প্রতিভা প্রথাগত শিল্পীদের তুলনায় অনেক ভালো। যেন মনে করলেই সে শিল্পী হতে পারত, শিল্পকে জীবনের পাথেয় করে এগিয়ে যেতে পারত, কিন্তু যায়নি। প্রশ্ন হয়, কেন যায়নি ? 
এদের মধ্যে কেউ হয়ত, সাহস করে উঠতে পারেনি।
আসলে আমাদের সমাজে ভাল লাগার থেকে ভাল থাকার জন্য বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়। কিন্তু অর্থের নিরিখে মাপা সেই ভাল থাকা, আদেও ভাল থাকা হয়ে ওঠে না। আবার অনেকের ক্ষেত্রে, তারা দুদিকেই পারঙ্গম। তাই যেটা বেশি ভাল লাগছে সেটাই করছে।
আসলে সমাজকে দোষ দেওয়াটাও বোধ হয় ঠিক না। কারন অনেক ক্ষেত্রেই,  ওই শিল্প কোন অপেশাদার শিল্পীকে একটা স্ট্রেস রিলিফের মতো কাজ দেয়। সেক্ষেত্রে শিল্প যদি তার পেশা হত, তাহলে সেটাই হতো তার কাছে স্ট্রেসফুল। তার থেকে বরং মনের এক কোনায়, সন্তর্পনে শিল্পকে বাঁচিয়ে রাখা ভাল।
তবে সব চেয়ে অবাক হই, সেইসব লোককে দেখে, যে বন্ধুকে অনেকদিন ধরে চিনি, তার কোন সুপ্ত গুনকেই জানতাম না। হঠাৎ দেখে চমকে উঠি। 
আসলে মানুষের মধ্যে এই রকম গুণের বাহার থাকলে তবেই মনে হয় সম্পূর্ণ। তাতে হয়ত জীবনটা রঙিনও হয়।
অপেশাদার বা অ্যামেচার শিল্পের মজাই আলাদা।
তা যেন অনেক বেশি রঙিন, আর অনেক বেশি আনন্দদায়ক, সৃষ্টিকর্তা ও উপভোগকারী দুজনের কাছেই।
কাজের ফাঁকে সময় বাঁচিয়ে একটু ছবি আঁকা, গান গাইতে পারা বা লেখালিখি বা অন্য যে কোন কিছু। এতেই তো মনে হয় আনন্দ, বেঁচে থাকার আসল মানে। হোক না কিছু এমনি এমনি, সব কিছু জাগতিক প্রয়োজনের তাগিদে হবে তার কি মানে? 
হোক না আমরা সবাই সেই ভুল স্বর্গের বাদিন্দা, যেখানে নিয়মের বাইরেও কিছু হয়, প্রয়োজনের বাইরেও হয়।
এইভাবেই যেন চলুক সব কিছু।
এই তো জীবন।