Friday 21 February 2020

পাপ ও এনার্জি

অনেকদিন ধরেই কথাখান মনের মধ্যে সুড়সুড়ি দিচ্ছিল, যে ভাল মানুষ, ভাল সংস্থা, ভাল দল কাকে বলে। ভালত্বের মাপকাঠি কি? আসলে ভাবনার শুরুটা ভারতের রাজনৈতিক দল গুলো ও রাজনৈতিক ব্যক্তি বর্গ নিয়ে। সচরাচর কোন রাজ্যে বা দেশে ক্ষমতাসীন শাসক দলের নিন্দেমন্দ অহরহ শোনা যায়। ভাল করে ভেবে দেখুন প্রতিটা রাজনৈতিক দলের বিরুদ্ধে কোন না কোন গুরুতর অভিযোগ আছে, রক্তে হাত রাঙানোর ইতিহাস আছে, যেমন বিজেপির গোধরা, কংগ্রেসের শিখ দাঙ্গা, সিপিএমএর মরিচঝাঁপি ইত্যাদি ইত্যাদি। অর্থাৎ একটা ব্যাপার পষ্ট সমস্ত পোলিটিক্যাল পার্টির হাতেই রক্ত আছে। এখন পার্টির সমর্থকরা হয় ব্যাপারটা জানেন না অথবা ওই পাস্ট জেনেও অন্ধ ভাবে ভালবাসে ( অনেক খানি এরকম, I don't bother about your past)। 
কিন্তু এত গেল সমর্থকদের কথা, কিন্ত সাধারণ জনগণ যখন পোলিং বুথে যান তখন ঠিক কি ভেবে ভোট দেন ? কারণ আপনি রাস্তায় ভাল করে কান পাতলে এটুকু বুঝবেন তারা এটা ভাল করে জানে প্রতিটা রাজনৈতিক দলের কমবেশী অধিকাংশ নেতা চোর-চোট্টা ও বদমাইশ। কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতির সাপেক্ষে যাকে তার কম খারাপ মনে হয় তাকেই হয়ত ভোটটা দেয়। আর এই কারনেই সরকার পরিবর্তন হয়, কারণ সময়ে সময়ে প্রতিটা রাজনৈতিক দলের মূল্যায়ন বদলায় সাধারণ মানুষের চোখে। বিজ্ঞানের ছাত্র হিসেবে আমার আগ্রহ জাগে এই মূল্যায়ন পদ্ধতি নিয়ে। বড় বড় ইন্টেলেকচুয়ালরা যতই এই ভারতবাসীকে অজ্ঞ মনে করুক, তা আসলে নয়। কমবেশি সবাই ভাবে। 
আগেই বললাম ভাল খারাপের বিষয়টা সময়ে সময়ে  পরিবর্তন হয় এবং এটা আপেক্ষিকও বটে।আচ্ছা বলুন তো কোন জিনিস ঠান্ডা বা গরম বোঝান কি করে, মানে এক টুকরো বরফ এর থেকে আপনার শরীরের তাপমান গরম আবার আগুনের শিখার থেকে ঠান্ডা। অনেক সময় আমরা মিনারেল ওয়াটার কিনতে গিয়ে বলি, 'ঠান্ডা নয়, নরমালটা দেবেন'। নরমাল মানে স্বাভাবিক, এখন আমরা মোটামুটি স্বাভাবিক বলি ওই ধরুন 20-30℃ জলকে। আবার যে টেম্পারেচার এর জল আমরা সাধারণ বলি সেই টেম্পারেচার এর চা কেই আমরা বলি ঠান্ডা হয়ে গেছে। 
মানুষের পাপ পুণ্যটাও এভাবে নির্ভর করে। এখন দেখুন পৃথিবীতে পাপহীন মানুষ হয় না, খুঁজে পাবেন না, বুকে হাত দিয়ে বলুন আপনি কোনদিন কোন অন্যায় করেননি। পারবেন? মনে তো হয়না। 
আসলে পাপহীন মানুষ পরম শূন্য তাপমাত্রার মতো, যেখানে এনার্জি শূন্যের কাছেই। প্রতিটি ধাপে এনার্জি নিতে নিতে তাপমাত্রা বাড়ে। আর এই এনার্জি এমনি এমনি বাড়ে না, কোন ক্রিয়া বা প্রতিক্রিয়া করতে হয় সেই বস্তুকে, তবেই সেই বস্তু এনার্জি লাভ করে। এখন পাপও সেরকম, সমাজে চলতে গেলে ক্রিয়া প্রতিক্রিয়ায় পাপের পরিমাণ বাড়ে। 
এখন যখন এনার্জি যদি একটা নির্দিষ্ট সীমা পর্যন্ত যায়, তখন তার তাপমাত্রা বাড়তে বাড়তে সাধারণ তাপমাত্রায় পৌঁছবে। কিন্তু তার পরও যদি সে এনার্জি নেয়, তাপমাত্রা আরও বাড়বে। আর তাকেই আমরা গরম বা উচ্চ তাপমাত্রা বলি। 
এখন জীবনে স্বাভাবিক কাজ কর্ম করতে গিয়ে আমরা কিছু পাপ কাজ করি। তাতেই আমরা সাধারণ মানুষের স্তরে আসি। এখন অনেক সময় দেখা যায়, আমরা সৎ লোককে বোকা বলে থাকি, বুদ্ধি করে ঠিক সময় আখের গোছাতে পারিনি বলে। আসলে সে ওই পাপ গুলো করে সাধারণ এর থেকে জাতে উঠতে পারেনি। আবার অত্যধিক পাপ করলে সে সাধারণ এর জাত থেকে বিচ্যুত হয়।
মজার ব্যাপার হলো একই পরিমাণ এনার্জি নিলে সমস্ত বস্তুর একই পরিমাণ তাপমাত্রা বৃদ্ধি হয় না। তার ভর বা mass যদি বেশি হয়, তাহলে দেখব তাপমাত্রা বৃদ্ধি কম হচ্ছে। তেমনই সমাজে একই অন্যায় করে বড় মানুষের পাপ কম হয় কিন্তু ছোট মানুষের পাপ বেশি হয়। 
আবার ওই যে বললাম একই তাপমাত্রার জলকে সাধারণ কিন্তু চা কে ঠান্ডা বলি। তেমনই একই পাপ করে একজন শিল্পপতি যতটা ছাড় পান একজন অধ্যাপক বা অধ্যাপিকা নন। 
আগে আমরা জানতাম পরম শূন্য তাপমাত্রায় এনার্জি শূন্য, পরে গিয়ে জানলাম কোয়ান্টাম মেকানিক্স এর মতে পরম শূন্যতেও কিছু এনার্জি থাকে। ঠিক যেমন আমরা জানতাম যুধিষ্ঠির সত্য কথা বলেন, কিন্তু তারও রথের চাকা মাটি ছুঁল।

মোদ্দা কথা এই যে পাপ একটা সাধারণ ব্যাপার। কিন্তু অত্যাধিক পাপ সাধারণ নয়, তা ক্ষতিকারক।
তাই মানুষ বিচার করার আগে তার একটি পাপ দেখে বিচার করা যায় না, বরফ থেকেও ধোঁয়া ওঠে, গরম জল থেকেও ওঠে, কিন্তু দুটোর তাপমাত্রা তো এক নয়। 
হয়ত বা এই ওপরের কথা গুলো নিতান্ত ভাট বকা বা আমার অর্থহীন কল্পনা। কিন্তু আপনি এতক্ষণ ধরে এই পাগলের প্রলাপ পড়লেন তার ধন্যবাদ দিয়ে আপনাকে ছোট করব না।
তবুও বলব কোথাও একটা এক সমান্তরাল সম্পর্কে আছে - পাপ ও এনার্জি।