Sunday 20 May 2018

সত্যজিৎ রায়ের মজার ফর্দ

সন্দেশ পত্রিকাতে মাঝে মধ্যে নানা রকম মজার ধাঁধা বের হতো, যার মধ্যে কতকগুলি তৈরী করেছিলেন  সত্যজিৎ রায়। এটি একটি বাজারের ফর্দ। বামদিকে উপকরণ আর ডানদিকে পরিমাণ আছে। দেখুন তো সব কটা পারেন কি না।

ঘুম কেন আসে না আমার ঘরে

বয়সসন্ধিতে অনেকেরই রাতে তাড়াতাড়ি ঘুম আসে না, তা এর জন্য বাড়িতে অনেক কথা শুনতো হয়-
" রাত জেগে কি যে করিস, খালি ফেসবুক আর হোয়াটসঅ্যাপ "
"early to bed , early to rise..... ব্লা ব্লা ব্লা "
তা আজ পড়তে পড়তে এর একটা বেশ যুতসই বৈজ্ঞানিক ব্য়াখ্য়া পেলাম। 
আমাদের মস্তিস্কের পিনিয়াল গ্ল্যান্ড মেলাটোনিন হরমোন ক্ষরণ করে, যার ফলে ঘুম পায়। সাধারণত বাচ্চাদের এটা রাতের শুরুর দিকেই ক্ষরণ হয়, আর ঠিক সময় ঘুম পেয়ে যায়। 
কিন্তু টিনএজ এলেই সমস্য়ার শুরু, তখন আর মেলাটোনিন দাদা ঠিক সময়ে আসেন না, আসেন রাত করে ( কি অবাধ্য়ই না হয়েছে মেলাটোনিন )। আর তার ফলেই দেরি করে ঘুম আসে, আর যত সমস্যার শুরু।
অবশ্য বয়স বাড়লে দৈনিক রুটিনের সাথে শরীর adjust হয়ে যায়, তখন no-problem। কিন্তু টিনএজে সমস্য়া হবেই । আর তাই সকালে ঘুম থেকে উঠতেও দেরি হয়। তাইতো প্রবাদ আছে -
"ভোর ৪টে ওঠা সহজ নয়, কিন্তু ৪টে অবধি জাগা সহজ।"
যাকগে, তা এবার থেকে 
টিনএজার বন্ধুরা ঘুম থেকে ওঠা নিয়ে কেউ কিছু বললে তাকে এটা শুনিয়ে দিয়ো। 😃😃

ঘুমের দেশ


ঘুমের ঘোরে স্বপ্নদেশে বলবো কথা আজ সারা রাত 

নতুন করে বাঁচতে চেয়ে  মন সাজতে চাইছে নতুন সাজ 
অর্থহীন এই নীরবতা থাক না আরও কিছুক্ষণ 
ভাবতে লাগছে বড্ড ভাল ঢেউ তুলেছে সুর নতুন 
কান্নাভেজা ঝরা পাতা সঙ্গী করে চলতে চাই
হোঁচট খেয়ে বারে বারে রূপকথারা পথ হারায় 
দুর্বোধ্য সব ইশারাতে হচ্ছে কথা অনর্গল 
ঘড়ির কাঁটা থেমে আছে যন্ত্রপাতি সব বিকল 
ঘর ছেড়েছে বাস্তুসাপ পুরানো ঠিকানার সন্ধানে 
ভোরের বেলার ছোট্ট মেয়ে সব অসুখের ওষুধ জানে
জগতবিষ্ণুর পরপারে রণক্লান্ত অবসরে 
থামবে এসে সব গল্প শেষ হবে নতুন করে।।  


জোনাকিরা আলো জ্বালায় কীভাবে ?


রবিবার সন্ধ্যাবেলা, তাতাই তার দাদার সাথে উঠোনে বসে গল্প করছে। গতকাল তাতাই তার মা-বাবা আর দাদার সাথে তাদের দেশের বাড়ি বেড়াতে এসেছে। হঠাৎ লোডশেডিং হয়ে গ্যালো। কি আর করা যাবে, এখানে তো আর জেনারেটর বা ইনভারটার নেই, অগত্যা অন্ধকারেই বসে থাকতে হলো। তাতে অবশ্য খুব একটা অসুবিধা হচ্ছিলো না কারণ এখানে উঠোনে বেশ হাওয়া দেয়, ফলে গরম সেরকম লাগছিল না। হঠাৎ কোত্থেকে কতকগুলো জোনাকি উঠোনে চলে এলো। জোনাকি দেখেই তাতাই বলে উঠল – ‘দ্যাখো দাদা কত্ত জোনাকি, আচ্ছা দাদা জোনাকিরা আলো পায় কোথা থেকে ?’ 
দাদা বলল – ‘জোনাকির দেহে
একধরনের রাসায়নিক বস্তু আছে, যার বিক্রিয়ার ফলে আলো বের হয়।’
তাতাই বলল – ‘কি সেই রাসায়নিক বস্তু, আমায় তার গল্প বলো।’
দাদা বলতে আরম্ভ করলো – ‘জোনাকির দেহের শেষ খন্ডকে
ফোটোসাইট নামক একধরনের কোশ থাকে, যার মধ্যে ‘ফায়ারফ্লাই লুসিফেরিন’ নামক এক যৌগ থাকে, যা লুসিফারেজ উৎসেচকের দ্বারা এ.টি.পি. ও অক্সিজেনের উপস্থিতিতে ডাইঅক্সিটেন গোত্রের এক অস্থায়ী অন্তরবর্তী যৌগ তৈরী করে।’
লুসিফেরিনের সাথে অক্সিজেন ও এ.টি.পি. বিক্রিয়া করে অক্সিলুসিফেরিন তৈরী করে এবং  কার্বন ডাই অক্সাইড বেরিয়ে যায়

দাদাকে থামিয়ে তাতাই বলে উঠল – ‘
এ.টি.পি. কী ?’
দাদা বলল –
এ.টি.পি. হল সেই যৌগ যা প্রতিটি জীবের দেহে ঘটে চলা প্রত্যেক বিক্রিয়াতে শক্তি যোগায়। এই যে শ্বসনের ফলে গ্লুকোজ ভেঙ্গে শক্তি উৎপন্ন হচ্ছে , তা এই এ.টি.পি.-র মধ্যে সঞ্চিত থাকে। এবার যখনই শক্তির দরকার হয় তখনই এই এ.টি.পি. ভেঙ্গে প্রয়োজনীয় শক্তি ব্যবহৃত হয় এই যে আমরা হাত পা নাড়াচ্ছি , পেশি সঞ্চালন হচ্ছে, কথা বলছি, তার সমস্ত শক্তি এই এ.টি.পি.-র  থেকেই আসছে। তেমনই জোনাকির আলো জ্বলার শক্তি তাও আসছে এই এ.টি.পি. থেকেই।
তো যা বলছিলাম, লুসিফেরিন থেকে
ডাইঅক্সিটেন গোত্রের যে অস্থায়ী যৌগ তৈরী হয়, সেটি থেকে কার্বন ডাই অক্সাইড বেরিয়ে যায় আর সেটি অক্সিলুসিফেরিন তৈরী করে। এবার এই অক্সিলুসিফেরিন যৌগ উত্তেজিত অবস্থায় আলো বিকিরণ করে। এবার ওই ফোটোসাইট কোশের পিছনে কিছু আয়নার মতো প্রতিফলক কোশ থাকে, যার ফলে বিকিরিত আলো আরও বেশি ‌উজ্জ্বল দেখায়।’
তাতাই বলে উঠল – ‘জোনাকির এই আলো জ্বালিয়ে লাভ কি হয় ?’
দাদা বলল – ‘লাভ তো হয়ই, এই আলোর মাধ্যমে জোনাকিরা একে অপরের সঙ্গে যোগাযোগ করে। প্রত্যেক প্রজাতির জোনাকির আলোর রঙ বা আলোর জ্বলা-নেভার ছন্দ আলাদা, যা সংকেতের মত কাজ করে। এই আলোক সংকেতের মাধ্যমে অনেক সময় জোনাকিরা শিকারও করে
Photuris verisicolor প্রজাতির জোনাকি শিকার করছে Photinus tanytoxus জোনাকিকে

তাতাই অবাক হয়ে বলল – ‘শিকার করে ? কীভাবে ?’ 
দাদা হেসে বলল – ‘আগেই বলেছি প্রত্যেক প্রজাতির জোনাকির আলোর রঙ বা আলোর জ্বলা-নেভার ছন্দ আলাদা। এবার অনেক সময় এক প্রজাতির শিকারি জোনাকি অন্য প্রজাতির সংকেত নকল করতে পারে, তার মাধ্যমে অন্য প্রজাতির জোনাকিকে কাছে ডেকে নেয়। যাকে কাছে ডাকছে সে বেচারা জানেও না কি বিপদ তার জন্য অপেক্ষা করছে। এবার ওই জোনাকিটি কাছে আসতেই শিকারি জোনাকিটি হঠাৎ আক্রমণ করে বসে।
তবে শুধু জোনাকিই নয়, টিনোফোরা পর্বের প্রাণীদের ক্ষেত্রেও এই রকম দেহের থেকে আলো বিকিরণ ঘটে। জীববিজ্ঞানের ভাষায় এই আলো বিকিরণকে জৈবজ্যোতি বা বায়োলুমিনিসেন্স বলে।’
তাতাই বলল – ‘বাঃ বেশ মজার তো, আচ্ছা দাদা এটা কে আবিষ্কার করেন ?’
দাদা বলল – ‘জন হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের দুজন বিজ্ঞানী, জীববিদ্যার উইলিয়াম ম্যাকেলয় আর রসায়নের এমিল হোয়াইট এই জোনাকির বায়োলুমিনিসেন্সের উপর গবেষণা করেন। এমিল হোয়াইট প্রথম লুসিফেরিনের গঠন আবিষ্কার করেন ও কৃত্রিম ভাবে লুসিফেরিন তৈরী করেন। তাদের দুজনকেই এটার আবিষ্কর্তা বলা যায়। তবে এখনও এ নিয়ে গবেষণা থামেনি, এখন চেষ্টা চলছে কীভাবে এই বায়োলুমিনিসেন্সের মাধ্যমে আলো জ্বালানো যায়। এই তো কদিন আগে খবর পেলাম আমেরিকার ম্যাসাচুসেটস ইন্সটিটিউট অফ টেকনোলজির কিছু বিজ্ঞানী এমন গাছ বানিয়েছেন যারা আলো বিকিরণ করে। ভেবে দেখতো, যদি একবার এই গাছ রাস্তার ধারে লাগিয়ে দেয় তাহলে রাত্রি বেলা আর বৈদ্যুতিক আলোর দরকার হবে না, কতও বিদ্যুৎ বেঁচে যাবে। তবে ভাবিস না শুধু বিদেশেই গবেষণা হচ্ছে, আমাদের ভারতীয় বিজ্ঞানীরাও পিছিয়ে নেই। গৌহাটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ডঃ অনুরূপ গোহাইঁ বরুয়া আর তার ছাত্ররা মিলে দেখিয়েছেন জোনাকির মধ্যে সর্বক্ষণ অক্সিজেনের সরবরাহ রাখলে সবসময়ের জন্য আলো জ্বালিয়ে রাখা যায়। এই রকম আলো যদি বড় মাপে বানানো যায় তাহলে তো আরও বিদ্যুৎ বেঁচে যাবে, যেসব মানুষের ঘরে এখনও আলো পৌঁছয়নি তাদের ঘরেও আলো পৌঁছনো যাবে। তবে পুরো বিষয়টাই এখনও গবেষণার পর্যায়ে। আশা করি অদূর ভবিষ্যতে আমরা এর সুফল পাবো।’

       সবুজপাতা পত্রিকার শীত-বসন্ত সংখ্যা ২০১৮ তে প্রকাশিত

মজার চিঠি

একটা সময় ছিল, যখন বাংলায় শিশুসাহিত্যের বেশ রমরমা ছিল। সত্যজিৎ রায়, লীলা মজুমদার, নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী, নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায় ও আরো কত সাহিত্যিক ছিলেন, যাদের হাত দিয়ে বেরিয়েছে অসংখ্য মণিমুক্ত। তখন ছোটোদের জন্য প্রকাশিত পত্রিকাও ছিল প্রচুর - সন্দেশ, শুকতারা, আনন্দমেলা ও আরও কত কি। সেইসব পত্রিকায় গল্প, ছড়ার পাশাপাশি প্রকাশিত হত মজার কমিকস ও হরেক রকম ধাঁধা। এই রকম কিছু চিঠির ধাঁধা নিয়ে আজকের পোস্ট। প্রথম দুটি প্রকাশিত হয়েছিল সন্দেশ পত্রিকায়,


আর তৃতীয়টি রইল শুকতারা থেকে
 
দেখি তো বন্ধুরা পারেন কি না। আর বাড়ির ছোটোদেরও করতে দেবেন। 

ভ্রান্ত ধারণার ইতিহাস

এই বছর কার্ল হাইনরিশ মার্ক্সের জন্মের ২০০ বছর পূর্ণ হল। এই বিপুল সময়ে গোটা বিশ্বে অনেক পরিবর্তন এসেছে, সোভিয়েত রাশিয়ার পতন হয়েছে, মুক্ত অর্থনীতির জোয়ার লেগেছে সারা বিশ্বে। তবুও মার্ক্সের বক্তব্য গুলির প্রাসঙ্গিকতা হারায়নি। তবে এই সময়ে মার্ক্সের কথার অপব্যাখ্যার সংখ্যাও বেড়েছে। অবশ্য মার্ক্স জীবিত থাকতেই তার কথা গুলির ভুল ব্যাখ্যা শুরু হয়ে গেছিল। আজও বহু লোক মার্ক্সকে ভুল ব্যাখ্যা করেই চলেছেন। তার পাশাপাশি চলে আসছে তার সম্পর্কে কিছু মিথ, বলা ভাল গুজব। তার মধ্যে একটি হল মার্ক্স নাকি বলেছিলেন, তিনি মার্ক্সবাদী নন। অনেকে এই ধারণা বিশ্বাস করেন। যেমন মার্কিন নাট্যকার হাওয়ার্ড জিন তার 'Marx in Soho' নাটকে দেখিয়েছিলেন - মার্ক্স বলছেন, ‘আমি নিজেই কি মার্ক্সবাদী?' তখনও একইরকম বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছিল। 
কিন্তু আসল ঘটনাটা সম্পূর্ণ আলাদা। মার্ক্স-বিশেষজ্ঞ হাল ড্রপার-এর  'Karl Marx and Theory of Revolution' বইয়ে এই ঘটনাটি বিশদভাবে উল্লেখিত আছে। একসময় মার্ক্স তাঁর জামাতা সাংবাদিক পল লাফাৰ্গকে বলেছিলেন, “এই যদি তোমাদের মার্ক্সবাদ হয় তাহলে আমি মার্ক্সবাদী নই।" কারণ লাফাৰ্গ ছিলেন ফরাসী সমাজতন্ত্রী দলের নেতা ও তৎকালীন ফরাসী সমাজতন্ত্রীরা নিজেদেরকে মার্ক্সবাদী বলে আখ্য়া দিত।   কিন্তু তারা যেভাবে মার্ক্সবাদকে ব্যাখ্যা করত তা অপব্যাখ্য়ার সমান। তারা ছিলো সংস্কারবাদী (reformist)। তাই মার্ক্স তাদের প্রতি বিরক্ত ছিলেন এবং সেই বিরক্তি থেকেই ওই বিখ্য়াত উক্তি। পরবর্তীকালে ফ্রেডারিখ এঙ্গেলস বহুবার উক্তিটির কথা উল্লেখ করেছেন মার্ক্সবাদের অপব্যাখ্যা খণ্ডন করার জন্য।
যেমন- 
. ১৮৮১ সালে এডুয়ার্ড বার্নস্তাইনকে একটি চিঠিতে এঙ্গেলস সংস্কারবাদীদের প্রসঙ্গে এইকথা লিখেছিলেন।
২. এরপর ১৮৯০ সালের ৫ আগস্ট কনরাড স্মিডটকে চিঠিতে এঙ্গেলস লিখেছিলেন - And the materialist conception of history also has a lot of friends nowadays to whom it serves as an excuse for not studying history. Just as Marx used to say about the French "Marxists" of the late 'seven ties: "All I know is that I am not a Marxist." ( ইদানিংকালে ইতিহাসের বস্তুবাদী ধারণার বেশ কিছুসংখ্যক ভয়ঙ্কর বন্ধু দেখা দিয়েছে, যারা এই বস্তুবাদী ধারণাকে ব্যবহার করে ইতিহাসকে না-পড়ার অজুহাত হিসেবে । এই কারণেই সত্তরের দশকের শেষের দিকে ফরাসী সমাজতন্ত্রীদের সম্পর্কে মার্ক্স মন্তব্য করেছিলেন, ‘আমি যা বুঝতে পারছি তা হল, ‘আমিই তাহলে মার্ক্সবাদী নই’।”) ( সূত্র-  The Correspondence of Marx and Engels, page-415)
৩. ১৮৯০ সালের ২৭ আগস্ট এঙ্গেলস পল লাফাৰ্গকে চিঠি লেখেন। সেইসময়  জার্মান পাটিতে একদল বুদ্ধিজীবী ছিলেন তারা মার্ক্সবাদী বলে দাবী করলেও আসলে ছিলেন সংস্কারবাদী। তাদের সম্পর্কেই বলতে গিয়ে মার্ক্সের মন্তব্যটি স্মরণ করিয়ে দেন। তিনি লিখেছিলেন -   These gentry all dabble in Marxism, albeit of the kind you were acquainted with in France ten years ago and of which Marx said: 'All I know is that I'm not a Marxist.' ( সূত্র- Marx and Engels Collected Works, Volume 49 : Letters 1890-92, page-22)

এঙ্গলসের এই বক্তব্য থেকে আমরা দেখতে পাচ্ছি যে, মার্ক্স কখনই বলেন নি যে, তিনি মার্ক্সবাদী নন। যারা মার্ক্সের বিপ্লবী মতবাদকে সংস্কারবাদে পরিণত করে তাকে মার্ক্সবাদ বলে চালিয়ে দিতে চেয়েছিলেন তাদের প্রসঙ্গেই বিরক্তি সহকারে তিনি ওই উক্তি করেন। 
আসলে মার্ক্সের আসল কথাটি ছিল -  "ce qu'il y a de certain c'est que moi, je ne suis pas Marxiste"।  যার অনুবাদ করলে দাঁড়ায় "what is certain to me is that [, if they are Marxists, then] I am not [a] Marxist". এবার অনেকেই আক্ষরিক অনুবাদ করতে গিয়ে উহ্য় কথাটিকে বাদ দেন। ফলে কথাটির অর্থ সম্পূর্ণ পাল্টে যায়। আর সেই থেকেই ভ্রান্ত ধারণার জন্ম হয়। 

স্বপ্ন কথা








জগতবিষ্ণুর পরপারে বসে আছি 

ঠাহর করতে পারছি এলেম কোত্থেকে 
তারপর হঠাৎ মনে পড়ল
বসে ছিলাম বাড়ির বিছানাতে
বাইরে ঝমঝম বৃষ্টি পড়ছিল
লোডশেডিংএ চারিদিক অন্ধকার
কখন যেন সে অন্ধকার গাঢ় থেকে গাঢ়তর হয়ে গেছে
খেয়ালই করিনি
একসময় বৃষ্টির শব্দও আর কানে আসছে না
অদ্ভুত এক নৈশব্দ আর নিরালোক গ্রাস করেছে সবকিছু
সেই অন্তহীন তমিস্রার মাঝ থেকে
অনুভব করলাম এক অপার শান্তি
তারপর এক সময় সেই নির্জনতা অসহ্য হয়ে উঠল
কিন্তু চেষ্টা করেও তার মধ্যে থেকে মুক্তি পেলাম না
তারপর তো সেই জগতবিষ্ণুর পরপারে
কিন্তু এখানেও তো আমি একা
সহসা দেখি হরিণীর ন্যায় এক আলো
দ্রুত , উজ্জ্বল অথচ নিদারুণ কোমল
কাছে আসতেই দেখি এতো জিনপরি
সে আমায় হাত ধরে নিয়ে গেল এক জনঅরণ্যে
কিছুক্ষণ পর দেখি কোথায় জিনপরি
আমি তো ভিড়ের মাঝে হারিয়ে গেছি
আর সে কখন দিনের আলোর মতো ভেসে গেছে
এমন সময় চোখে আলোর ঝলকানি লাগে
ঘুম ভেঙে দেখি বৃষ্টি থেমে গেছে
বাইরে তাকিয়ে দেখি একটা হলুদরঙা পাখি
উড়ে গেল বৃষ্টিভেজা আকাশের দিকে
ঠিক সেই জিনপরির মতো।

পল্টুর সন্দেহ


পল্টুর সন্দেহ


ঢং ঢং ঢং ....

বাড়ির গ্র্যান্ড ফাদার ক্লকটাতে নটা বাজল।
ঘড়ির আওয়াজ শুনে পল্টু ওর স্টাডি টেবিল ছেড়ে উঠে দাড়াল।তারপর একটা লম্বা হাই তুলে দোতলার ঘর থেকে বেরিয়ে নীচের তলার দিকে রওনা হল।
পল্টু ওরফে শ্রীমান প্রতুল মুখার্জী, বালীগঞ্জ গভর্মেন্ট হাই স্কুলের ক্লাস নাইনের ছাত্র। বন্ধুদের মধ্যে খুবই বিজ্ঞানমনস্ক আর যুক্তিবাদী বলে পরিচিত। ভূত-ভগবান কিছুতেই তার বিশ্বাস নেই, মায়ের দেওয়া তাগা-তাবিজ কিছুই রাখেনা। অবশ্য ঘটা করে পৈতেটা নিয়েছিল, সেটা যদিও গিফ্টের লোভে (তবে পল্টু তা মানতে চায় না)। কিন্তু এর থেকেও মজার ব্যাপার হলো পল্টুর সবচেয়ে প্রিয় বন্ধু অম্বু ওরফে অম্বরীশ পুরোপুরি উল্টো, ভূতেতো ভয় পায়ই, তার উপর আবার এক শালিখ, এক চোখ দেখা ইত্যাদি খুতখুতানি লেগেই আছে। এই নিয়ে পল্টু তাকে অনেকবার বুঝিয়েছে, কিন্তু অম্বরীশের বিশ্বাস যেন চীনের পাঁচিল, শত হূণ আক্রমণেও তা টলবে না। তবে কুসংস্কারের বাতিকটা বাদ দিলে দুই বন্ধুতে দারুণ মিল। স্কুল থেকে ফেরার পথে কারেন্ট নুন দিয়ে কাঁচা কুল খেতে খেতে বাড়ি ফেরা কিংবা গরমকালে লেবুজল দেওয়া বরফ, উফ্ কি আনন্দ যে লাগে।
সেই অম্বরীশ পল্টুকে ভূততত্ত্ব সম্পর্কে একটা বই পড়তে দিয়েছে, এতক্ষণ সেই বইটাই পড়ছিল সে। দেওয়ার সময় পল্টু অবশ্য বলেছিল –
‘‘দিচ্ছিস দে, কিন্তু এইসব হাবিজাবি বই পড়ে আমি সময় নষ্ট করতে রাজি নই’’  
কিন্ত হাজার হোক অম্বু দিয়েছে বলে কথা, তাই সে না পড়ে থাকতে পারল না।
পল্টু এখন বাড়িতে সম্পূর্ণ একাওর মা আর বোন গেছে শ্রীরামপুরে, ওর বড়মাসির মেয়ের বিয়ে। ওদের কাজের মাসি মানদা মাসিও রান্না-বান্নার কাজ সেরে সাড়ে আটটার মধ্যে চলে গেছে। বাবা অফিস থেকে ফেরার সময় এখনো হয়নি। পল্টু ভাবল- ‘‘ যাই এইবেলা চট করে মিলন স্যরের বাড়ি থেকে অঙ্ক খাতাটা নিয়ে আসি।’’ যেমন ভাবা তেমন কাজ।
হঠাৎ, একতলায় নামতে নামতে পল্টু শুনতে পেল নীচ থেকে একটানা কিরকম একটা
টক টক করে শব্দ হচ্ছে।
‘‘তবে কি ...., ধুর ধুর কি সব ভাবছি আমি ’’ - নিজেকেই নিজে বকল পল্টু, ‘‘অম্বরীশের ওই বইটাই যত নষ্টের গোড়া।’’  তবুও মন থেকে সব সন্দেহ দূর না হওয়া পর্যন্ত পল্টু ঠিক ভরসা পাচ্ছে না, তাই সে পা টিপে টিপে নীচে গেল। গিয়ে বুঝতে পারলো যে আওয়াজটা আসছে রান্নাঘর থেকে। তারপর সে খুব সাবধানে রান্নাঘরের দিকে এগিয়ে গেল, অতি সন্তর্পণে রান্নাঘরের দরজা খুলল। এ কি ......
ওহো! মানদা মাসিও না, কাজ করেছে অথচ রান্নাঘরের কলটা ভালো করে বন্ধ করেনি। আর সেই কারণেই কলের জল তলায় রাখা বাসনের উপর পড়ে ওই রকম শব্দ হচ্ছিল। যাক বাবা বাঁচা গেল!- অজান্তেই কথাটা পল্টুর মুখ দিয়ে বেরিয়ে এল।
এরপর চটপট তৈরী হয়ে নিয়ে দরজায় তালা দিয়ে সে সাইকেল নিয়ে বেরিয়ে পড়ল। রাস্তায় বেরিয়ে দেখলো অন্ধকার, লোডশেডিং হবে হয়তো, বাড়িতে ইনভার্টার ছিলো বলে বুঝতে পারেনি। যাই হোক, সে চলে গেল মিলন স্যরের বাড়ি, স্যর বাড়িতেই ছিলেন। পল্টু খাতাটা নিয়ে যখন বেরিয়ে আসছে তখন ওর মনে হলো কিছু যেন তার পিছনে কে ডাকছে, কিন্তু পিছনে ফিরে তাকাতে কাউকে দেখতে পেল না।
সাইকেলে চড়ে সে যখন যাচ্ছে তখন তার মনে হলো কিছু যেন তার পিছনে আসছে। কিন্তু থেমে গিয়ে চারদিক চেয়ে দেখল কোত্থাও কিছুই নেই, ফাঁকা রাস্তা। এবার পল্টু বেশ ঘাবড়ে গেল। তাই সে তাড়াতাড়ি করে সাইকেল চালাতে লাগলো, কিন্তু অবাক কান্ড, আবার সেই আওয়াজটা, যেন পিছনে কিছু আসছে।
পল্টু এবার সাইকেলের গতি বাড়িয়ে দিল, কিন্তু আওয়াজটা কিছুতেই পিছু ছাড়ছে না। প্রাণপণে সে সাইকেল চালাচ্ছে, যত তাড়াতাড়ি সম্ভব বাড়ি পৌঁছতো চাইছে।
বাড়ির কাছে পৌঁছে এবার সে আরও অবাক, দেখে বাড়িতে লাইট জ্বলছে, কিন্তু তার স্পষ্ট মনে আছে সে বাড়ি থেকে বেরোনোর সময় লাইট নিভিয়ে বেরিয়েছিল। এরপর দরজার কাছে গিয়ে দেখে দরজায় তালা নেই। দরজাটা খুলতে গিয়ে দেখে দরজা ভিতর থেকে বন্ধ। পল্টুর মাথা এখন ভোঁ ভোঁ করছে, সবকিছু গুলিয়ে যাচ্ছে তার। তাই সাতপাঁচ না ভেবে সে দমাস দমাস করে দরজায় ধাক্কা মারতে লাগলো। হঠাৎ দরজাটা খুলে গেল।
সোজা তাকিয়ে পল্টু দেখে তার বাবা রাগী রাগী মুখ করে দাঁড়িয়ে আছেন। এই প্রথম পল্টু বাবার রাগী মুখ দেখেও মনে শান্তি পেল, হাঁফ ছেড়ে বাঁচল।
কিন্তু বাবা রাগ করবেন কি, পল্টুকে হাঁফাতে দেখে তিনি নিজেই তাকে ঘরে এনে বসালেন। বাবার থেকেই পল্টু জানতে পারল, যে বাবা আজ তাড়াতাড়ি অফিস থেকে ফিরেছেন, আর দরজায় তালা দেখে ডুব্লিকেট চাবি দিয়ে দরজা খুলেছেন। কিন্তু পল্টু হাঁফাচ্ছে কেন ? তা তিনি জিজ্ঞেস করায় পল্টু সব কথা খুলে বলে। সমস্ত কিছু শোনার পর তিনি হো হো করে হেসে ওঠেন, আর পল্টুকে বাইরে এনে দেখান যে তার সাইকেলের পিছন চাকায় একটা শুকনো গাছের ডাল আটকে আছে। যেটা সাইকেল চালানোর সময় ঘসা খেয়ে আওয়াজ হচ্ছিলো, আর পল্টু ভেবেছে বুঝি তার পিছনে কিছু আসছে।
এই বলে বাবা হাসতে হাসতে ঘরে চলে যান, কিন্তু পল্টু দাঁড়িয়ে থাকে। তার মনে পড়ে রাস্তায় যখন সে থেমেছিলো তখন ভালো করে দেখেছিলো, সাইকেলের পিছনে তো তখন কিছু ছিল না। তবে কি ...............


সবুজপাতা পত্রিকার শারদ সংখ্যা ২০১৭ তে প্রকাশিত