ক্ষান্তবুড়ির দিদিশাশুড়ির
পাঁচ বোন থাকে কালনায়,
শাড়িগুলো তারা উনুনে বিছায়,
হাঁড়িগুলো রাখে আলনায়।
ছোটবেলায় 'ছড়ার মজা' বলে আমাকে একটা বই কিনে দেওয়া হয়েছিল। উপরের কবিতার লাইনগুলি বইটার প্রথম কবিতার প্রথম চার লাইন। ছোট্ট বইটা ছিল এমনই সব মজার কবিতায় ভরা। বই এর লেখক শ্রী রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। আর এভাবেই আমার সাথে প্রথম আলাপ সেই গল্পদাদুর। হ্যাঁ দাদুই বটে, ছবিটা প্রথম দেখে শুধু আমার কেন যে কোন বাচ্চাই সেটা মনে করবে। যেন কোন রূপকথা দেশের লোক। ইয়া লম্বা দাড়ি, আর পা থেকে মাথা অবধি জোব্বা পড়ে আছেন। সব কিছুর মধ্যে যেন মুখটা ছোট্ট করে দেখা যাচ্ছে, বলা ভাল উঁকি দিচ্ছে যেন। তখন আমার বয়স তিন কি চার, তখনও স্কুলে ভর্তি হইনি।
এরপর আর সমস্ত বাঙালি শিশুর মতোই আমিও স্কুলে গেলুম, আর হাতে পেলুম সহজ পাঠ।
ছোট খোকা বলে অ আ
শেখেনি সে কওয়া।
ধীরে ধীরে পাঠ এগোতে থাকল। ক্লাস ২এর পর আমরা আর সহজ পাঠ পরিনি, কিন্তু সেই স্মৃতি গুলো মনে থেকে গেছে। এবার একটা মজার কথা বলি। সহজ পাঠের প্রথম দিককার কবিতা গুলো বেশ ছন্দ মিলিয়ে পড়া যেত। পড়তে ভালোই লাগত। কিন্তু শেষের দিকে "ষ্টীমার আসিছে ঘাটে, প’ড়ে আসে বেলা" বলে একটা কবিতা ছিল। কিন্তু তখন সেই সব ছন্দ বুঝতাম না। শুধু জানতাম লাইনের শেষে এসে থামতে হয়। আর এতেই হতো বিপত্তি। কবিতাটা পড়লে এই রকম শোনাত। “শূন্য হয়ে গেল তীর আকাশের কোণে / পঞ্চমীর চাঁদ ওঠে দূরে বাঁশবনে / শেয়াল উঠিল ডেকে মুদির দোকানে।” অবাক হয়ে যেতাম। কি রকম বোকা বোকা লাগত আমার। আর এদিকে দাড়ি কমা অনুযায়ী থামলে তাতে মানে হত, কিন্তু ছন্দ পেতাম না ঠিক। ভাবতাম কোথাও একটা গণ্ডগোল আছে। এখন এই কথা গুলো মনে পড়লে বেশ হাসি পায়।
পৃথিবীতে হয়তো অনেক প্রাইমার আছে। বাংলা ভাষাতেও আছে আরো। কিন্তু সহজ পাঠ কোথাও একটা আলাদা। মনের অনেক ভিতরে।
এরপর ক্লাস এগিয়েছে, একটু একটু করে বড় হয়েছি। প্রতি ক্লাসেই অন্তত একটা করে রবীন্দ্রনাথের পদ্য ও গদ্য থাকত। তবে শুধু পাঠ্য বইয়েও নয়, তার বাইরেও রবীন্দ্রনাথের অনেক কবিতা পড়েছিলাম। তখন আমাকে বাড়ি থেকে আরও দুটো কবিতার বই কিনে দেওয়া হয়েছিল - 'শিশু' আর 'শিশু ভোলানাথ'। তবে সব কবিতা গুলো যে পড়তাম তা নয়। যেগুলো ভাল লাগত, সেই গুলোই বারে বারে পড়তাম। তারমধ্যে শিশু বইটা থেকে 'মাস্টারবাবু' কবিতাটা বেশ প্রিয় ছিল। কবিতাটা এতবার পড়েছিলাম মুখস্ত হয়ে গেছিল।
তবে এছাড়াও কিছু কবিতা মুখস্ত করতে হয়েছিল। স্কুলে পরীক্ষার জন্য আর পাড়ায় রবীন্দ্র জয়ন্তীর জন্য। তখন রবীন্দ্র জয়ন্তী ছিল আমার কাছে বেশ একটা উত্তেজক ব্যাপার-স্যাপার। তবে একটা জিনিস কবিতা বলব, মঞ্চে উঠব এটা নিয়ে বেশ আনন্দ থাকেলেও আসল মজাটা টের পেতাম মুখের সামনে মাইকটা পাওয়ার পর। বার বার মনে হত এই যদি ভুলে যাই। তবে আমার একটা অদ্ভুত ক্ষমতা ছিল, মানে এখনও আছে আর কি। আমি কবিতা বলাকালীন কবিতা থেকে কিছু শব্দ মুছে দিয়ে নিজের মতো কিছু শব্দ বসিয়ে নিতাম। এতে একটা জিনিস হত, মঞ্চে বলার সময় ঘাবড়ে যেতাম না। কিন্তু সমস্যাটা হত এর পরে। ভীষণ বকা খেতাম আরকি। কারণ রবীন্দ্রনাথের এই কবিতা গুলো কম বেশি সবার জানা। ফলে ফাঁকি দেওয়ার কোন উপায় ছিল না।
শিশু ভোলানাথ বইটা থেকে একটা কবিতা আমার বেশ ভাল লাগত - খেলা ভোলা। কবিতাটা অবশ্য সহজ পাঠেও ছিল। কবিতার লাইন গুলো পড়লেই কি রকম চোখের সামনে ছবি ভেসে উঠে।
ধীরে ধীরে পাঠ এগোতে থাকল। ক্লাস ২এর পর আমরা আর সহজ পাঠ পরিনি, কিন্তু সেই স্মৃতি গুলো মনে থেকে গেছে। এবার একটা মজার কথা বলি। সহজ পাঠের প্রথম দিককার কবিতা গুলো বেশ ছন্দ মিলিয়ে পড়া যেত। পড়তে ভালোই লাগত। কিন্তু শেষের দিকে "ষ্টীমার আসিছে ঘাটে, প’ড়ে আসে বেলা" বলে একটা কবিতা ছিল। কিন্তু তখন সেই সব ছন্দ বুঝতাম না। শুধু জানতাম লাইনের শেষে এসে থামতে হয়। আর এতেই হতো বিপত্তি। কবিতাটা পড়লে এই রকম শোনাত। “শূন্য হয়ে গেল তীর আকাশের কোণে / পঞ্চমীর চাঁদ ওঠে দূরে বাঁশবনে / শেয়াল উঠিল ডেকে মুদির দোকানে।” অবাক হয়ে যেতাম। কি রকম বোকা বোকা লাগত আমার। আর এদিকে দাড়ি কমা অনুযায়ী থামলে তাতে মানে হত, কিন্তু ছন্দ পেতাম না ঠিক। ভাবতাম কোথাও একটা গণ্ডগোল আছে। এখন এই কথা গুলো মনে পড়লে বেশ হাসি পায়।
পৃথিবীতে হয়তো অনেক প্রাইমার আছে। বাংলা ভাষাতেও আছে আরো। কিন্তু সহজ পাঠ কোথাও একটা আলাদা। মনের অনেক ভিতরে।
এরপর ক্লাস এগিয়েছে, একটু একটু করে বড় হয়েছি। প্রতি ক্লাসেই অন্তত একটা করে রবীন্দ্রনাথের পদ্য ও গদ্য থাকত। তবে শুধু পাঠ্য বইয়েও নয়, তার বাইরেও রবীন্দ্রনাথের অনেক কবিতা পড়েছিলাম। তখন আমাকে বাড়ি থেকে আরও দুটো কবিতার বই কিনে দেওয়া হয়েছিল - 'শিশু' আর 'শিশু ভোলানাথ'। তবে সব কবিতা গুলো যে পড়তাম তা নয়। যেগুলো ভাল লাগত, সেই গুলোই বারে বারে পড়তাম। তারমধ্যে শিশু বইটা থেকে 'মাস্টারবাবু' কবিতাটা বেশ প্রিয় ছিল। কবিতাটা এতবার পড়েছিলাম মুখস্ত হয়ে গেছিল।
তবে এছাড়াও কিছু কবিতা মুখস্ত করতে হয়েছিল। স্কুলে পরীক্ষার জন্য আর পাড়ায় রবীন্দ্র জয়ন্তীর জন্য। তখন রবীন্দ্র জয়ন্তী ছিল আমার কাছে বেশ একটা উত্তেজক ব্যাপার-স্যাপার। তবে একটা জিনিস কবিতা বলব, মঞ্চে উঠব এটা নিয়ে বেশ আনন্দ থাকেলেও আসল মজাটা টের পেতাম মুখের সামনে মাইকটা পাওয়ার পর। বার বার মনে হত এই যদি ভুলে যাই। তবে আমার একটা অদ্ভুত ক্ষমতা ছিল, মানে এখনও আছে আর কি। আমি কবিতা বলাকালীন কবিতা থেকে কিছু শব্দ মুছে দিয়ে নিজের মতো কিছু শব্দ বসিয়ে নিতাম। এতে একটা জিনিস হত, মঞ্চে বলার সময় ঘাবড়ে যেতাম না। কিন্তু সমস্যাটা হত এর পরে। ভীষণ বকা খেতাম আরকি। কারণ রবীন্দ্রনাথের এই কবিতা গুলো কম বেশি সবার জানা। ফলে ফাঁকি দেওয়ার কোন উপায় ছিল না।
শিশু ভোলানাথ বইটা থেকে একটা কবিতা আমার বেশ ভাল লাগত - খেলা ভোলা। কবিতাটা অবশ্য সহজ পাঠেও ছিল। কবিতার লাইন গুলো পড়লেই কি রকম চোখের সামনে ছবি ভেসে উঠে।
শীতের বেলায় দুই পহরে
দূরে কাদের ছাদের ’পরে
ছোট্ট মেয়ে রোদদুরে দেয়
বেগনি রঙের শাড়ি।
শিশু ভোলানাথের আরেকটা কবিতাটার সাথে নিজের মনের কথাটা খুব মিলে যেত। সেটা হল রবিবার কবিতা। সত্যি আমিও ওই রবিবারের জন্য সারা হপ্তা অপেক্ষা করেতাম, আর আমারও এটাই মনে হত
সোম মঙ্গল বুধ এরা সব
আসে তাড়াতাড়ি,
এদের ঘরে আছে বুঝি
মস্ত হাওয়া - গাড়ি?
রবিবার সে কেন, মা গো,
এমন দেরি করে?
এই ভাবে আমার একদম ছোটবেলা জুড়ে ছিলেন রবীন্দ্রনাথ। তবে শুধু কবিতাও নয়, আমার গানও ভাল লাগত। অবশ্য এ ভাল লাগা মানে সুর বা ছন্দটা ভাল লাগা, কথা বোঝার মতো বয়স হয়নি। এর মধ্যে একটা গান ছিল, আমরা সবাই রাজা। এই গানটাতে আমি ছোটবেলায় একটা দলবদ্ধ নৃত্যনাট্যে নেচেছিলাম। সেই সুরটা বড় ভাল লেগেছিল। আর একটা গানের ছন্দটা বেশ ভাল লাগে, গানটা কেউ না থাকলে মনের আনন্দে একা একা গাইতাম। অবশ্য সুর মিলত না। সেটা হল-
এই ভাবে আমার একদম ছোটবেলা জুড়ে ছিলেন রবীন্দ্রনাথ। তবে শুধু কবিতাও নয়, আমার গানও ভাল লাগত। অবশ্য এ ভাল লাগা মানে সুর বা ছন্দটা ভাল লাগা, কথা বোঝার মতো বয়স হয়নি। এর মধ্যে একটা গান ছিল, আমরা সবাই রাজা। এই গানটাতে আমি ছোটবেলায় একটা দলবদ্ধ নৃত্যনাট্যে নেচেছিলাম। সেই সুরটা বড় ভাল লেগেছিল। আর একটা গানের ছন্দটা বেশ ভাল লাগে, গানটা কেউ না থাকলে মনের আনন্দে একা একা গাইতাম। অবশ্য সুর মিলত না। সেটা হল-
মম চিত্তে নিতি নৃত্যে কে যে নাচে
তাতা থৈথৈ, তাতা থৈথৈ, তাতা থৈথৈ।
তারি সঙ্গে কী মৃদঙ্গে সদা বাজে
তাতা থৈথৈ তাতা থৈথৈ তাতা থৈথৈ॥
হাসিকান্না হীরাপান্না দোলে ভালে,
কাঁপে ছন্দে ভালোমন্দ তালে তালে,
নাচে জন্ম নাচে মৃত্যু পাছে পাছে,
তাতা থৈথৈ, তাতা থৈথৈ, তাতা থৈথৈ।
কী আনন্দ, কী আনন্দ, কী আনন্দ
দিবারাত্রি নাচে মুক্তি নাচে বন্ধ--
সে তরঙ্গে ছুটি রঙ্গে পাছে পাছে
তাতা থৈথৈ, তাতা থৈথৈ, তাতা থৈথৈ॥
তবে একটা জিনিস এই সময়টায় সেভাবে রবীন্দ্রনাথের গদ্যের দিকে আকর্ষিত হয়নি। কেন জানি না ওই সহজ পাঠের পর রবীন্দ্রনাথের গদ্য আর ছোটবেলায় সেভাবে পড়া হয়নি। ওই দশ-বারো বছর নাগাদ কে একটা গল্প গুচ্ছ উপহার দিয়েছিল। কে দিয়েছিল মনে নেই, তবে জন্মদিনের উপহার এটা মনে আছে। সেখান থেকে তখন কটা গল্প পড়েছিলাম। প্রথম গল্প পড়েছিলাম ক্ষুদিত পাষাণ। এক দাদা বলেছিল ভাল গল্প, কিন্তু পড়ে আমার ভাল লাগেনি তখন, আসলে ওই বয়সে ওটা পড়া ঠিক হয়নি, কিন্তু তখন অতশত বুঝতাম না। আর এটা পড়ার পর আমার একটা ধারণা হয় যে রবীন্দ্রনাথ কবিতাই ভাল লেখেন, আর উনি তো বিশ্বকবি, কবিতাই লেখা উচিত। খামোকা কেন যে গেলেন গল্প লিখতে, কে জানে বাবা। তবে এ ধারণাও ভেঙ্গেছিল আর দু-এক বছর পরই। সে গল্প বলব পরের পর্বে। আজ এটুকুই থাক।
আমার রবীন্দ্রনাথ - দ্বিতীয় পর্বের লিঙ্ক
আমার রবীন্দ্রনাথ - দ্বিতীয় পর্বের লিঙ্ক
প্রত্যেকটা লেখায় কোথাও কিছু একটা আছে...এটায় আরো বেশী কিছু হয়ত..কারণ-আমাদের প্রাণের ঠাকুর রবি,তিনি আর আমাদের শিশুবেলাকে এমন করে represent করার জন্য কী বলব বুঝতে পারছিনা Susim..
ReplyDelete