Sunday 26 April 2020

চারবন্দীর টুপির ধাঁধা

4 জন বন্দীকে 60 সেকেন্ডের মধ্যে গুলি করা হবে, যদি না তাদের মধ্যে কোন একজন তার নিজের টুপির রঙ সঠিকভাবে বলতে পারে।
যদি সে সঠিক বলতে পারে তবে তারা সবাই মুক্ত হবে, অন্যথায় সে ভুল হয় তাহলে সবাইকে গুলি হবে।
তারা নীচের ছবির মতো দাঁড়িয়ে আছে।

তারা কে কোথায় দাঁড়িয়ে আছে সেটা তারা জানে। আর এটাও জানে যে দুটি কালো টুপি এবং দুটি সাদা টুপি রয়েছে।
তবে কে কোন টুপি পড়ে আছে সেটা তারা জানে না এবং তারা তাদের নিজস্ব টুপিটির রঙ দেখতে পারবে না।
তারা নিজেদের মধ্যে কথা বলতে পারবে না।
তারা নিজের জায়গা থেকে নড়তেও পারবে না, এমনকি তাদের মাথা ঘোরানোও  বারণ

সুতরাং, প্রথম বন্দী  দ্বিতীয় এবং তৃতীয় বন্দীকে  দেখতে পাবে।

দ্বিতীয় বন্দী শুধুমাত্র দেখতে পাবে তৃতীয় বন্দীকে।

তৃতীয় বন্দী কাউকেই দেখতে পাবে না।

চতুর্থ বন্দী পাঁচিলের পিছনে রয়েছে যাতে কেউ তাকে দেখতে না পায় এবং সেও কাউকে দেখতে পাবে না।
কারুর কোন ছায়া বা প্রতিচ্ছবি পড়ছে না।

৪৫ সেকেন্ড পরে কেউ তার টুপিটির সঠিক রঙটি বলে উঠে।
কত নম্বর বন্দী এবং সে কীভাবে জানল যে সে ঠিক বলছে?

ছবির ধাঁধা

মিস্টার রনসনের পরিবার। সকালের প্রাতরাশের টেবিলে সবাই।কিচ্ছুক্ষন পরই অফিসে যাবেন মিস্টার রনসন, তার আগে খবরের কাগজে চোখ ভুলিয়ে নেওয়া। সেই সময় তোলা এক ছবি।
আপনি কী বলতে পারবেন ছবিটায় কটি ভুল আছে ?


Monday 20 April 2020

অতনুর ট্যালেন্ট নেই

লোকে বলে অতনুর না কি বেশ ভাল ছেলে, কারুর সাতে পাঁচে থাকে না। কেউ কেউ তো বেশ বুদ্ধিমানও বলে। অতনু এই সব শুনে মনে মনে খুশি হয়।কিন্তু বাস্তব জীবনে সেসবের কোন প্রতিফলন অতনু দেখতে পায়না।আসলে অতনুর জীবনে কোনো অ্যাম্বিশান নেই। সে থাকার প্রয়োজন বোধ করেনি। অতনু দেখেছে এই অ্যাম্বিশান মানে লক্ষ্য ব্যাপারটা বেশ গোলমেলে। এটা থাকে দুইদল লোকের, এক যারা এক্সট্রীম কেরিয়ারিস্ট আর এক যারা একটু শিল্পী মানুষ। নিজেকে এরা একটা জায়গায় দেখতে চায়, অবশ্য সেই দুইদলের দেখাটা ভিন্ন, আর অদ্ভুত ব্যাপার হলো এরা দুইদলই একে অপরের অবস্থানটাকে কটাক্ষ করে। তা এরা তো নিজেদের মতো করে খুশি। এর বাইরেও একদল থাকে , যাদের সেরম মান বা মানি কোনটাই নেই, আবার কোন স্পেশাল ট্যালেন্টও নেই। এরা অই গড়পরতা জীবন কাটায়, আর দেশের কিচ্ছু হচ্ছে না বলে নেতাদের গালাগাল দেয়, কিন্তু আপদে পড়লে একটা সই এর জন্য কাউন্সিলর বা চেয়ারম্যানের পায়ে গড়িয়ে পড়ে। এদের স্তর ভেদ আছে, যারা একটু বড় তারা একটু বড় মাপের নেতাদের কাছে যায়, কিন্তু ওই চরিত্র এদের একই। আর এরাই সংখ্যায় সবচেয়ে বেশি।

তা অতনু এদের কারুর মধ্যে পড়ে না, অতনুর কোনকিছুতেই সেরম কোন চার নেই। ওই হলেই হোল। বাতিকের মধ্যে একটা স্বভাব ছিল তা হল বই পড়া। ছিল কারন বলছি স্বভাবটা কদিন হল গেছে। আসলে অনেক বই কেনার সামর্থ্য অতনুর ছিল না, আর লাইব্রেরীর অবস্থাও বস্তাপচা, নতুন কোন বই নেই। আর আসবেই বা কেন, কেউ আর  সাধ করে পড়ে না কি বই। ওই কিছু পয়সা ওলালোকই শখ মেটায়, আর বাকি যাদের শখ আছে তারা জীবন যুদ্ধে এতটাই ব্যস্ত যে বই পড়ার সময় নেই। অবশ্য অতনুর সময় ছিল। তাই এক জনের পরামর্শে ইবুক পড়া শুরু করে, প্রথম প্রথম এর ওর কম্পিউটারে পড়ত। বন্ধুরা ভালবেসে তাকে কিছুক্ষন তাদের কম্পিউটার ব্যবহার করতে দিতও, কিন্তু কাহাতক আর অন্য বন্ধুদের বাড়ি গিয়ে বই পড়া যায়। তাই সে পয়সা জমিয়ে একটা স্মার্টফোন কিনল, ঐ জিএসটি  চালু হওয়ার আগে কোম্পানিগুলো স্টক ক্লিয়ারেন্সের জন্য ভাল সেল দিচ্ছিল সেই সময় সস্তায় পেয়ে যায়। ওর এক বন্ধুই ওকে বুক করে দিয়েছিল, ও জাস্ট পয়সাটা দিয়েছিল। প্রথম প্রথম বেশ ভালই চলছিল, কিন্তু সমস্যা শুরু হল কদিন পর থেকে। ইবুক ছেড়ে ও ইউটিউব ভিডিও আর ফেসবুকে বেশি সময় দিয়ে দিচ্ছিল। ও বুঝতে পারছিল যে এটা হচ্ছে, কিন্তু বেরতে পারছিল না। আসলে ও বেরনোর চেষ্টাই করেনি সেভাবে, নাকি করেছিল, কে জানে? ঐ যে বললাম অতনুর চার নেই কোন ব্যাপারে। তো ফেসবুকেই ও কয়েকটা সাহিত্যপ্রেমী গ্রুপে মেম্বার হয়। সেখানে অনেকেই গল্প লেখে। অতনুও সখ করে কয়েকটা লিখেছিল। কেউ কেউ প্রথম প্রথম বেশ ভাল বলেছিল, কিন্তু কদিন যেতেই দেখল ওর গল্প সেরম কেউ নিচ্ছে না। এখানে তিন ধরনের গল্প বা কবিতা চলে, এক সস্তা রুচির প্রেমের কি আবেগের গল্প, দুই ফেসবুক সেলিব্রিটি নামন এক বিশেষ প্রজাতির গল্প , আর তিন রিয়েল লাইফে সেলিব্রিটি কিছু পপুলার লেখক লেখিকার গল্প। তাই অতনুর গল্প মার খেল।

আসলে অতনু কিছু বলতে চায় জগতকে, কিন্তু মুখ ফুটে বলতে পারে না। ওর মনে হয় গল্প লিখি, কিন্তু লিখলে পড়বেটা কে? আর তার থেকেও বড় কথা লিখতে গেলে একটু কথার মারপ্যাঁচ লাগে। গল্প হয়তো ওর আছে, কিন্তু তার প্রেজেন্টেশন? উপস্থাপনা করবে কি ভাবে? তাহলে কি ও কবিতা লিখবে? সেখানে তো গল্প উপন্যাসের মতো অত কথা নিয়ে খেলা করতে হয় না তাও চেষ্টা করেছিল, হয়েওছিল কটা, কিন্তু দশ-বারোটা লেখার পর ও দেখল নতুন কিছু সেরম আসছে না। যেগুলো প্রথমে নতুন বলে ভ্রম হচ্ছে আসলে সেগুলো পুরানো গুলোই, নতুন রূপে আসছে শুধু। 

এতো গেল লেখার কথা, কিন্তু লিখলে তা দেবে কোথায়? লিটল মাগ্যাজিন অবধিই তার দৌড়। কিন্তু সেগুল তো বিক্রি হয় আড়াইশ-তিনশ সংখ্যা মতো। বাকি পড়ে থাকে সম্পাদকের ঘরে গাঁটরি বাঁধা অবস্থায়। তাও সেগুলো পড়ে কজন, আর পড়লেও মনে রাখে আর কে? একটা লেখার আয়ু বড় জোর তিন মাস, তাও সেটা দুশ লোকের কাছে মাত্র। কিন্তু অতনুর যে অনেক কথা বলা চাই। বলবে কি ভাবে। তার গলায় সুরও নেই, যে গান গেয়ে বলবে। আর ছবির হাত? থাক সে কথা, স্কুলে বায়লজিতে হৃৎপিণ্ড আঁকায় দশে চারের বেশি পায়নি।

তবে মোবাইলটা হাতে পাওয়ার পর সে ছবি তোলার চেষ্টা করেছিল কটা। সে যা দেখে তা ক্যামেরা বন্দি করতে চেয়েছিল। কয়েকটা পেরেছিল, কিন্তু অধিকাংশই ব্যর্থ। মনে হচ্ছিল, ইশ যদি একটা ডিএসএলআর থাকত, তাহলে হয়তো পারত। কিন্তু সে হওয়ার জো নেই। এইসব দেখে তার মাথায় ফ্লিম বানানোর ভুত চাপে। তা সেটা বানাতে হলে তো পয়সা চাই, তা দেবে কে? কিন্তু তার চেয়েও দরকার ভাল কিছু সিনেমা দেখা। তাই ঠিক করেছিল দেখবে যখন সত্যজিৎ রায়কে দিয়েই শুরু করা যাক। তো দেখেছিল অনেক কিছুই, কিন্তু অপুর সংসারটা তার বেশ মনে ধরেছিল, হয়তো কোথাও অপুর সাথে তার মিল পেয়েছিল। কিন্তু বেশি দূর সে এগতে পারেনি। কারণ অপু তো সে নয়, অপুর কেউ ছিল না। তার বাড়িতে মা বাবা আছে, তাদের কে দেখতে হবে, রোজগার করতে হবে। তাই অপু হয়ে ওঠা তার আর হয়নি। তাই আউট হয়ে যাওয়া ক্রিকেটারের মতো প্যাভিলয়েনে ফিরে এসেছিল।

তা শেষ পর্যন্ত গল্প লিখবে বলেই মনস্থ করে। তা লিখবে তো বটে, কিন্তু একটা কথা তার মাথায় এল। সে লিখছে কার জন্য? যদি নিজের জন্য লেখে তাহলে সবাইকে পড়ানোর জন্য এত উৎসাহ কেন? সে ভেবে পেল না কার জন্য লিখছে বা লিখবে। কিন্তু সে লিখবে।

যাই হোক অনেক চেষ্টা চরিত্র করে একখানা গল্প সে দাঁড় করালো। তবে এবার আর কাউকে পড়ায়নি সে। একেবারে চিঠি করে পাঠিয়ে দিয়েছে 'লেখনী'-র অফিসে। দেখা যাক বড় পত্রিকায় ছাপে কি না।

তো রবিবার দুপুরে ফাঁকা সময়ে বসে সে সাতপাঁচ ভাবছিল। হঠাৎ ইচ্ছে হল টস করতে। ভাগ্যের পরীক্ষা হোক, লেখাটা মনোনীত হবে কি হবে না। কয়েনটা ছুড়ল ওপরের দিকে। কয়েনটা ঘুরছে, এই পড়লো বলে।



ব্যর্থতার দিনলিপি


কি হবে জেনে? কি হয়েছিল তার,
একদিন তো এমনিই যেত সে হারিয়ে
সময় হলেই সব হয়
, আমি কিছু নই

না কি আমিই সব?  নিজের প্রচেষ্টাতেই কি হয় সব?
না
, জানি না তাও
তাই খুঁজে বেড়াই বিকল্প রাস্তার খোঁজ

অর্থহীন পথে বাধাহীন রাস্তায় ঘুরে ফিরি আমি
সময়কে করেছি গুরুত্বহীন
 
মানুষের প্রতি আর কোনও বিশ্বাস বেঁচে নেই


এখন আর বাড়ী ফেরার কোন তাড়া নেই
অন্ধকার রাতে আমাকে দেখে কুকুরগুলোও আর ডাকে না
 
ভেবে সুখ লাগে আর কোন ঝুট ঝামেলা নেই

আসলে আমি মানুষটাই যে আর নেই।। 

সাধারণ মানুষ



পথ হাঁটছিলাম জগতবিষ্ণুর প্রান্তরে
মনে এল হঠাৎ -  মায়া কি ?
প্রশ্ন করলাম তাকে, কিন্তু উত্তর দিলেন না
বদলে পাঠিয়ে দিলেন, এই ধরাধামে
মনুষ্য রূপে জন্মালাম এখানে
এসে অবশ্য প্রশ্নের কথা মনে ছিল না
জগতের রূপ দেখেই যার পরনাই মুগ্ধ
তারপর হঠাৎ একদিন কারা যেন সব কেড়ে নিল
লড়লাম বহুত, কিন্তু লাভ হল না, দেগে দিল এ রাষ্ট্রদ্রোহী
ধীরে ধীরে পরিস্থিতির বদল এল
ভাবলাম এই তো সুখ, নিশ্চিন্ত
কিন্তু জীবনে কি নিশ্চিন্ত হলে চলে
না জীবন তা থাকতে দেয়
বুঝলাম যা ছিল সুখ, আসলে তা ভাঁওতা
আবার লড়লাম, আজও লড়ছি,
কিন্তু আজ আর তেমন প্রাণ নেই
কতকটা যন্ত্রের মতো, আজ আর কিছু বুঝতে পারি না,
সত্যি মিথ্যে চিনতে ভ্রম হয়
এওমন সময় তিনি এলেন
বললেন ওরে চেয়ে দেখ
আমিই রাষ্ট্র , আমিই রাষ্ট্রদ্রোহী
ওহে মূর্খ তুই যাবি কোথায়?

 আজ বুঝলাম এটাই মায়া।

মহাভারতীয় কায়দা-কানুন



- জতুগৃহে যে নিষাদ রমণী ও তার পাঁচজন ছেলেকে কেন পুড়ে মরতে হল?
- সেটা বড় প্রশ্ন নয়, কথা হল আগুনটা কে লাগাল?
  এ নিশ্চয় ষড়যন্ত্র, সিবিআই তদন্তের দাবি তুললাম আমরা

  তা বড় যে দলিত-দরদী ,
এতদিন কি করলে তোমরা?
- আমরা তো কবেই কর্ণকে প্রার্থী করেছি, ও আমাদের দলিত সেলের নেতা।
  মানুষের বিপদের সময় যারা লুকিয়ে পড়ে তারা আবার কোন মুখে বলে কথা ?
- বাজে বকবক করো না, তোমাদের ভয়েই আজ আমাদের কর্মীরা ঘরছাড়া।
  মানুষ জেনে গেছে নারী নির্যাতনের জন্য পরিচিত তোমরা।
- যাদের নিজেদের ঘরের মেয়ে বউকে রাজনীতির বাজি করতেও ছাড়ে না
  তাদের মুখে একথা শোভা পায় না।
- দ্রৌপদী প্রেস বিবৃতেই তো বললেন
  তার অপমানকারীদের তিনি ইঞ্চিতে ইঞ্ছিতে বুঝে নেবেন।

  তরজা চলতে চলতে নরমেধ ভোট পর্ব এল
  বহু মানুষের প্রাণ নিয়ে তা পালিয়েও গেল।
  পাল্টে গেছে সমীকরণ
  তরজা ছেড়ে নতুন রাজাকে বরণ।

- আচ্ছা এই যে এতো বড় ইভেন্ট
  খরচা দেবে কে? সব তো শেষ করে দিয়েছে আগের গভর্নমেন্ট
- কেন চলে যাও উত্তরের দেশে
  প্রচুর সম্পদ হয়েছে তাদের অনেক পরিশ্রম শেষে।
- তো তারা তা দেবে কোন যুক্তিতে ?
- যুক্তি নয়, তারা দিতে বাধ্য দেশভক্তিতে।
  আর অতো কিছু নিয়ে কি হবে তাদের
  দেশ তো একটাই, গোটাটাই আমাদের।

  এরপর অশ্বমেধের যজ্ঞ শেষে
  ক্লান্ত আগুনের সামনে দাঁড়াল সে এসে
  একটা প্রশ্ন করেছিল মাত্র
  সঙ্গে সঙ্গে দেগে দেওয়া হল সে দুর্যোধনের মিত্র
  প্রশ্নটা আজ আর মনে নেই
  তাই কবি খালি দেখে যায়, আর লিখে যায়।