এয়ারপোর্টে
ঢোকার পর কিয়স্ক থেকে সেলফ চেক-ইন করে সোজা গিয়ে একটা বেঞ্চে বসে পড়লেন অভিজিৎ রায়। সঙ্গের জিনিসপত্র বলতে একখানা মিনি স্যুটকেস, তাই
ব্যাগেজ ড্রপের প্রশ্নই ওঠে না, আর তাছাড়া ফ্লাইটেরও এখন ঢের দেরী। তাই সিকিউরিটি ক্লিয়ারেন্সের
দিকে পরে গেলেই হবে, আপাতত একটু জিরিয়ে নেওয়া যাক – এই ভেবেই গা এলিয়ে দিলেন। তারপর
চারপাশ তাকিয়ে দেখলেন, খাঁ খাঁ করছে প্রায়, ইতিউতি কিছু কর্মচারী আর দু-তিন যাত্রী
ছাড়া মানুষ বলতে নিরাপত্তা রক্ষী কয়েকজন। সত্যিই কি দিনকাল পড়ল! সর্বক্ষণ গমগম করা
এয়ারপোর্ট কিরকম শান্ত, নির্জন। কোনদিন ভাবতে পারা গেছিল এমন হবে। এক ভাইরাসের জুজুতেই
সব কিছু যেন লাটে উঠেছে। তার ওপর এই সাইক্লোন আম্ফান, সব মিলিয়ে যেন শনির দশা চলছে।
এসব সাতপাঁচ ভাবতে ভাবতেই মুখ থেকে মাস্ক আর ফেসশিল্ডটা খুলে প্রাণ ভরে একটু নিশ্বাস
নিলেন। আরামে চোখটা বুজে এল, মনে হচ্ছিল খানিকটা যেন মুক্তির স্বাদ। এই কদিন ধরে ধকল
তোহ আর কম যাচ্ছে না।
এক বহুজাতিক
সংস্থার সেলস অ্যান্ড মার্কেটিং ডিপার্টমেন্টের উচ্চপদে আসীন অভিজিৎ। বিগত লকডাউনে
কোম্পানির ভালোই ক্ষতি হয়েছে। সেই চাপ সামলাতে তাকেও হিল্লি-দিল্লি করতে হচ্ছে। আসলে
গতকাল কোলকাতা থেকেই মুম্বাই যাওয়ার ফ্লাইট ছিল, কিন্তু ঝড়ের জন্য বাতিল হয়ে যায়। একরাশ
বিরক্তি নিয়ে ফিরে গেছিলেন। আজও অনেক ফ্লাইট বাতিল, ভাগ্যক্রমে একখানা টিকিট পাওয়া
গেছে। তবে ফ্লাইট ছাড়া না পর্যন্ত তিনি ভরসা করে উঠতে পারছেন না, কি বলা যায় শেষ মুহূর্তে
আবার বাতিল হয়ে গেল।
কিছুক্ষণ
বসার পর, মোবাইলে সময় দেখে উঠে পড়লেন।
তারপর
এগিয়ে গেলেন সিকিউরিটি ক্লিয়ারেন্সের দিকে।
***
সিকিউরিটি
ক্লিয়ারেন্স থেকে সোজা বেরিয়ে নির্ধারিত গেটের সামনের ওয়েটিং এরিয়াতে গিয়ে পৌঁছলেন
অভিজিৎ। একখানে একজন মানুষও নেই। অবশ্য না থাকারই কথা, সময় মত ফ্লাইট ছাড়তে এখনও কম
করে ঘন্টা দুয়েক দেরী। ঝড়ঝাপটার দিন বলে উনি সাততাড়াতাড়ি এসেছেন।
মিনি স্যুটকেসটাকে একপাশে রেখে ফোনটাকে অন করলেন। স্ক্যানিং এর সময় অফ করতে হয়েছিল।
সময় কাটানোর জন্য মোবাইল খুলে দাবা খেলতে লাগলেন। দাবার শখটা অবশ্য নেহাত হালেই হয়েছে।
একটা রাউন্ড খেলার পর দ্বিতীয় রাউন্ডে বেশ চাপে পড়েছেন, মন্ত্রীটাকে বাঁচাবেন কি করে
ভাবছেন, হঠাৎ মাথা তুলে সামনের দিকে তাকিয়ে চমকে উঠলেন।
উল্টোদিকের
বেঞ্চের এক কোনায় কেউ একটা বসে আছে। কখন এসে বসেছে তা খেয়াল করেননি অভিজিৎ। লোকটার
পোশাকআসাক বেশ অদ্ভুদ, খানিকটা জাম্পস্যুটের মতো। রঙটাও কিরকম হাল্কা হলদেটে খয়েরি।
মুখে মাস্ক ও মাথায় স্কালক্যাপটাও একই রঙের। আজ পর্যন্ত এত লোকজন দেখেছেন, এরকম জামাকাপড়
পরে ঘুরে বেড়াতে কাউকে দেখেননি। ভাবলেন কোন ছেলে ছোকরা হবে হয়ত, আজকাল ফ্যাশনের নামে
উদ্ভট সব ড্রেস বেরিয়েছে, এ হয়ত তারই কোন একটা। লোকটি নিবিষ্ট মনে হাতে মোবাইলের মতো
কিছু একটা নিয়ে ঘাঁটাঘাঁটি করছে। মোবাইলের মতো কারণ জিনিসটা যে মোবাইল নয় সেটা অভিজিৎ
প্রায় নিশ্চিৎ, মোবাইলে এত রঙ বেরঙের আলো জ্বলে না, এ যেন মোবাইলে কেউ টুনি দিয়ে সাজিয়েছে।
অভিজিতের একবার মনে হল, কোন সন্ত্রাসবাদী নয়তো, হাতে হয়ত ওটা কোন বিস্ফোরকের রিমোট
কন্ট্রোল, হয়ত প্লেন হাইজ্যাক করবে। তারপর ভাবলেন, না না, এসব জিনিস হলে সিকিউরিটি
ছাড়ত না। ভাবনা মন থেকে ঝেড়ে ফেলে ফের দাবা খেলায় মন দিলেন।
***
যথা সময়ে একজন বিমানসেবিকা আর একজন গ্রাউন্ড স্টাফ
এসে গেটের সামনে হাজির হল। ততক্ষণে আরও দশ-বারো জন যাত্রী এসে গেছে। অভিজিৎ মোবাইলটাকে
পকেটে পুরে আড়মোড়া ভেঙ্গে উঠে দাঁড়ালেন। আইডি প্রুফ আর চেক-ইন রিসিটটা এক হাতে নিয়ে
রাখলেন, আর অন্য হাতে স্যুটকেসের হাতলটা ধরে প্রস্তুত হলেন। হঠাৎ খেয়াল পড়ল তার, আরে
ওই অদ্ভুদ লোকটা কোথায় গেল?! চারপাশ ঘুরে দেখলেন, কিন্তু কোত্থাও তাকে দেখতে পেলেন
না।
ওদিকে
বিজনেজ ক্লাসের যাত্রীদের ডাকা শুরু হল, অভিজিৎ দেখল কেউ সেদিকে এগোচ্ছে না। তিনি বুঝলেন,
তিনি ছাড়া আজ আর কেউ নেই বিজনেজ ক্লাসে। অভিজিৎ গেটের মুখে এগিয়ে গেলেন।
***
প্লেন
টেক অফ করার পরেই সুইচ টিপে সিটটাকে এলিয়ে নিলেন। এবার একটা নিশ্চিন্তের ঘুম দেবেন।
অন্তত আগামী ঘণ্টা দুয়েকের জন্য সব কিছু ঠিকঠাক। ভাবনা চিন্তা আবার প্লেন থেকে নেমে
শুরু করবেন। একজন বিমানসেবিকাকে ডেকে বলে দিলেন তাকে যেন চা-কফি বা ওয়েলকাম ড্রিংসের
জন্য বিরক্ত না করা হয়, দরকার লাগলে তিনি নিজেই চেয়ে নেবেন। এরপর আরেকটি সুইচ টিপে
মাঝখানের ডিভাইডারটিকে তুলে দিলেন যাতে জায়গাটা একটু অন্ধকার হয়ে যায়। এরপর মাস্কটা
খুলে নিয়ে আরাম করে চোখ বুজলেন।
***
মিনিট
কুড়ি পরেই হঠাৎ ঝাঁকুনিতে ঘুমটা ভেঙ্গে যায় অভিজিতের। আবার ঘুমাতে গিয়ে দেখলেন, ঘুম
আর আসছেনা। অগ্যতা সোজা হয়ে বসলেন, সিটটাকেও বসার মতো করলেন। ডিভাইডারটাকেও নামিয়ে
নিলেন।
একটা কফি খাওয়া যাক, এই ভেবে বিমানসেবিকাকে ডাকতে যাবেন, হঠাৎ দেখেন অদ্ভুত কাণ্ড।
প্যসেজের উল্টোদিকের রো-এর সিটে বসে আছে সেই অদ্ভুত লোকটা। কিন্তু লোকটা উঠলো কখন
?! যতদূর তার মনে পড়ছে তিনি একাই বিজনেজ ক্লাসের যাত্রী, কিন্তু অপরদিকের বিজনেজ ক্লাসের
সিটে লোকটা এল কি করে। কে জানে, হয়ত শেষ মুহূর্তে এসেছিল। তিনি অন্যান্য যাত্রীদের
ঢোকার দিকে অত মনযোগ দেননি, তাই হয়ত খেয়াল করেননি। তবুও মন থেকে খটকাটা মুছল না। লোকটার
দিকে তাকিয়ে থাকাটা মনে হয় ও বুঝতে পারল, মুখ তুলে অভিজিতের দিকে তাকাতেই অভিজিৎ খানিকটা
অপ্রস্তুত হয়ে পড়ে। এরকম ভাবে কাউকে দেখা অশোভনীয়। লোকটা মনে হয় ব্যাপারটা বুঝতে পেরে
নিজে থেকেই ঘাড় নেড়ে বলল, “হাই”
- হ্যালো
- কিরকম
অদ্ভুদ না, এরকম ফাঁকা ফ্লাইট। কোনদিন এরকম হবে কেউ ভেবেছিল?
সচরাচর
রাস্তাঘাটে অচেনা লোকদের সঙ্গে আলাপ করা অভিজিতের ধাতের মধ্যে পড়ে না, কিন্তু আজ জানেন
না কেন তিনি এক দুর্দমনীয় আকর্ষণ অনুভব করছে কথা বলার জন্য। লোকটার মধ্যে কিরকম একটা
ইন্টারেস্টিং ব্যাপার আছে। তাই জবাব দিলেন, “হ্যাঁ, তা যা বলেছেন।”
এরপর
টুকটাক একথা সেকথা এগোতে থাকলো। আলোচনার বিষয়বস্তু মূলত করোনা ভাইরাস, লকডাউন আর অর্থনীতির
বেহাল অবস্থা। কথা চলতে চলতে অভিজিৎ বললেন, “মনে হচ্ছে ডিসেম্বর মাসের দিকে সব কিছু
আগের মতো হয়ে যাবে। পরের বছর ভালই যাবে। এ বছর যা যাচ্ছে।”
- হবে
না।
- হবে
না ?!
লোকটার
এহেন বেমক্কা উত্তরে খানিকটা অবাক হলেন। মনে মনে ভাবলেন, এ আবার কি অদ্ভুদ লোক, গোটা
পৃথিবী জুড়ে সকলে হাঁফ ছেড়ে বাঁচতে চাইছে, আর যেন উল্টো। লোকটা এরপর পরের বছর কি হতে
পারে সেই নিয়ে বলে যেতে লাগল। তবে এমন নির্লিপ্তভাবে বলছিল যেন মনে হচ্ছে লোকটা সব
দেখে শুনে এসেছে। অভিজিতের মনে হল, লোকটা নির্ঘাত একটু ছিটেল গোছের। নাহলে এরকম অদ্ভুদ
পোশাক, অদ্ভুদ কথাবার্তা স্বাভাবিক মানুষে বলে না। অন্য সময় হলে তিনি চুপ থাকতেন, এরকম
লোক হলে এড়িয়ে যেতেন। কিন্তু এই মহামারীর ফলে তার মানসিক ও শারীরিক চাপ বেড়েছে, ইদানিং
একটু খিটখিটে হয়ে গেছেন। আর তাছাড়া সবাই যখন আশার আলো দেখতে চায়, এ ব্যাটা বলে কি না
সেসব গুড়ে বালি।
তাই বেশ মেজাজের সঙ্গেই বললেন, “আপনি কি মশাই জ্যোতিষী ?! না কি ভবিষ্যৎ থেকে এসেছেন।
এরকম গড়গড় করে সব বলে দিচ্ছেন।”
- দ্বিতীয়টা
- অ্যাঁ
?!
লোকটা
জবাব না দিয়ে ঝুপ করে তার সিট থেকে উঠে পড়লো আর তারপর অভিজিতের দিকে এগিয়ে এল।
অভিজিতের
কিংকর্তব্য ভাবখানা তখনও কাটেনি, লোকটা এসে তার ঠিক পাশের রো-এর সিটটায় বসে পড়লো। অভিজিৎ
চট করে মাস্ক আর ফেসশিল্ডটা পরে নিল। মনে হল লোকটাকে বলবেন, আরে দুরত্ব বজায় রাখুন।
কি বলা যায় ওই সর্বনাশী ভাইরাস কার শরীরে আছে। কথাটা বলতে যাবেন, এমন সময় লোকটা বলল,
“আরে ওই মাস্ক আর ফেসশিল্ড পড়েছেন তোহ, ওটাই যথেষ্ট। ভয় পাবার কিছু নেই। আমার মুখেও
মাস্ক আছে, ভাইরাস ছড়াবে না। কোন চাপ নেই।”
- কিন্তু,
মানে আপনি ...
- হ্যাঁ
আমি ভবিষ্যৎ থেকেই এসেছি।
- কি
গাঁজাখুরি বলছেন। আমি কি দশ বছরের বাচ্চা নাকি। যা বলবেন তাই মানব।
এটা
বললেন বটে, তবে মনে মনে তিনিও অবাক। লোকটা যেভাবে তার মনের কথা বুঝতে পারল, তাতে এরকম
না হওয়ারও কিছু নেই।
লোকটা
পকেট থেকে সেই মোবাইলের মত যন্ত্রটা দেখিয়ে বলল – “এটা আমরা একটা প্রোটোটাইপ বানিয়েছিলাম।
এটা দিয়ে সময়ের আগে পরে যাওয়া যায়। কিন্তু, মশাই আমি ফেঁসে গেছি।”
- ফেঁসে
গেছেন? কি করে?
- এটা
টেস্টিং করছিলাম।। আগে কয়েকবার এক-দুমাস আগে পরে এসেছি, গেছি। ভালই ছিল সব। আজ রেঞ্জটা
বাড়িয়ে দেখছিলাম। কিন্তু এখন অতীতে এসেছি, আর ফিরে যেতে পারছি না। এখন খালি অতীতেই
যাওয়া যাচ্ছে।
মন না
চাইলেই লোকটার কথা যেন প্রায় বিশ্বাস করেনিলেন অভিজিৎ। লোকটার কথার মধ্যে কিরকম একটা
মোহময় ভাব আছে। তবুও জোর করেই একটু হেসে বললেন, “ধুর মশাই, এত খেলনা জাতীয় কিছু। এ
আবার হয় না কি। আপনি আমার সঙ্গে প্র্যাঙ্ক করছেন, হা হা। কি তাইতো?”
- না।
আপনার বিশ্বাস না হলে আসুন। আমার সাথে এটাই হাত রাখুন। বলুন কত দিন পিছনে যেতে চান।
এই বলে
লোকটা যন্ত্রটা তার সামনে বাড়িয়ে দিল। এবার যন্ত্রটাকে ভাল করে দেখলেন অভিজিৎ। খানিকটা
মোবাইলের মত হলেই সাইডে একাধিক বোতাম আছে, আর লাল নীল আলো জ্বলছে। লোকটার হাতটা মোবাইলের
স্ক্রিনের ওপর একটা লাল গোলের ওপর। আরও চারটে ওরকম লাল গোল আছে। ঠিক যেন লুডোর ঘুঁটি
রাখার ঘরের মত। লোকটা আবার বলল, “কি হল? বিশ্বাস না হলে হাত দিন। বলুন কদিন পেছবেন?
একদিন করেই দেখুন আগে। না কি আরও বেশি?।”
অভিজিৎ
ইতস্তত করছেন, কি করবেন ভাবছেন। তারপর মনে হল দেখাই যাক না কি হয়। খেলনা হলে তোহ কিছু
অসুবিধা নেই। আর সত্যি হলে ...
আচ্ছা
সে নয় যাবেন কদিন অতীতে। ভালই হবে, একদিন বেশি তোহ পাওয়া যাবে। এই ইঁদুর দৌড়ের কর্পোরেট
জীবনে একটি ঘণ্টা পাওয়াই মুল্যবান। তাই যন্ত্রের ওপর হাত রেখে বললেন “বেশ তবে। একদিন।”
“তাই
হোক”, বলে লোকটা সাইডের কয়েকটা বোতাম টীপে দিলেন।
শেষ
বোতামটা টেপার সঙ্গে শোঞেঈ মাথায় কীরকম এক যন্ত্রণা অনুভব করলেন অভিজিৎ। মাথা যেন ছিঁড়ে
পড়ছে। তখনই প্লেনটা প্রচণ্ড জোরে দুলতে লাগল। মনে হয় এয়ার পকেটে পড়েছে। প্রচণ্ড অস্বস্তি
সত্ত্বেও তিনি যন্ত্রটার থেকে হাত সরাতে পারছেন না। মনে হচ্ছে সেটা আঠার মতো আটকে গেছে।
এদিকে প্লেনে দুলুনি বাড়তে লাগল। আচমকা তার মাথাটা সামনের দিকে ঠুকে গেল ...
***
-স্যার,
স্যার আর ইউ ওকে ?
- হ্যাঁ
...
- স্যার,
উঠুন স্যার।
অভিজিৎ
চোখ মেললেন। তিনি দেখলেন তার সামনে এয়ারলাইন্সের একজন কর্মী, কথা গুলো তাকে উদ্দেশ্য
করেই বলছেন। চারপাশ চেয়ে দেখলেন তিনি এখনও ওয়েটিং এরিয়াতেই বসে আছেন। মাথাটা এখনও কিরকম
ঝিমঝিম করছে তার। তবে মনে মনে খানিক হাসি পেল তার, তাহলে স্বপ্ন দেখছিলেন। একটু ধাতস্থ
হয়ে কর্মীটির দিকে তাকিয়ে বললেন, “হ্যাঁ, বলুন।”
- স্যার,
সাইক্লোনের জন্য ফ্লাইট ক্যান্সেল হয়ে গেছে। আমি আন্তরিকভাবে দুঃখিত।
- আজকেও?
- হ্যাঁ
স্যার, সমস্ত ফ্লাইট ক্যান্সেল।
- ওহ
হঠাৎ
অভিজিতের খেয়াল পড়লো, আরে এত সেই কালকের লোকটা। গতকাল এই এসেছিল ফ্লাইট ক্যান্সেল হওয়ার
কথা বলতে। তখন রাগের মাথায় খানিক কড়া কথা শুনিয়েছিলেন একে। আজ মুখোমুখি হওয়াই অভিজিৎ
খানিক যেন অপ্রস্তুত বোধ করলো। দ্বিধা কাটিয়ে বলল, “এক্সকিউজ মি। কিছু মনে করবেন না।
গতকাল ফ্লাইট ক্যান্সেল হওয়ায় আপনার ওপর বেশ রাগারাগি করেছিলাম। সরি ফর দ্যাট।”
লোকটা অবাক মুখে বলল, “স্যার, আপনার কোথাও ভুল হচ্ছে। আমি তোহ গতকাল ডিউটিতে ছিলাম
না। আর তাছাড়া যতদূর জানি গতকাল কোন ফ্লাইট ক্যান্সেল হয়নি। আজকে ঝড় আসবে বলে সব ফ্লাইট
ক্যান্সেল হল হঠাৎ।”
- কি?
ঝড় আসবে?
- হ্যাঁ
স্যার, নিউজ দেখেননি। আম্ফান আসছে।
বাঁই
করে মাথাটা যেন ঘুরে গেল অভিজিতের। ঝড় আসবে, এখনও আসেনি?! তাহলে কি তিনি সত্যিই একদিন
আগে ...
দ্রুত পকেট হাতড়ে মোবাইলটা বের করলেন। সময় দেখতে গিয়ে দেখেন মোবাইল সুইচড অফ। অসহায়
ভঙ্গিতে কর্মীটির দিকে চেয়ে বললেন, “আজ তারিখ কত?”
- বিশে
মে
মাথায়
কিচ্ছু ঢুকছে না। আজ সকালে তিনি তারিখ দেখছেন একুশে মে। স্পস্ট মনে আছে তার কাল সারারাত
ঝড়টা তান্ডব চালাল। রাতে ভাল করে ঘুম হয়নি সেজন্য তার। কিন্তু এ কি করে সম্ভব ...।
চারপাশে আরেকবার তাকালেন। কোথায় গেল সেই অদ্ভুত লোকটা?!
তাকে এরকম বিচলিত দেখে কর্মীটি বলে উঠল, “স্যার কাউকে খুঁজছেন না কি?”
অভিজিৎ
কোন জবাব দিল না। লোকটি আবার বলল, “স্যার। চলুন স্যার। এখনও আকাশের অবস্থা ভয়ংকর হয়নি।
নয়তো এরপর আর ফেরার জন্য কোন গাড়ী পাবেন না।”
ঘোর
কাটিয়ে অভিজিৎ উঠে দাঁড়াল। “হ্যাঁ, চলুন।”
যেতে
যেতে এয়ারপোর্টের এক জায়গায় চোখ পড়লো, সময় দেখাচ্ছে দুটো বাজতে দশ। থমকে দাঁড়ালেন।
আরে এত পুরো চব্বিশ ঘণ্টা। একটা পঁচিশে ফ্লাইট ছেড়েছিল। হিসেব করলে তাই দাঁড়ায়। নিজের
চোখকেই বিশ্বাস করতে পারছিলেন না তিনি। তাকে দাঁড়াতে দেখে কর্মীটি বলতে উঠলো, “স্যার
চলুন। এইদিকে।”
অভিজিৎ
এগিয়ে গেলেন কর্মীটির পিছু পিছু।
********
No comments:
Post a Comment