Wednesday, 20 June 2018

আমার ডোরেমন চাই




বহুদিন আগের কথা। তখন খুবই ছোট। ক্লাস টু কিম্বা থ্রিতে পড়ি। আমাদের বাড়ির পুরানো টিভির বদলে একটা নতুন টিভি কেনা হয়েছিল। তাছাড়া আগের টিভিটা এমনিতেই খারাপ হয়ে গেছিল। নতুন টিভি আসতেই আমার আর আনন্দ ধরে না। আগের টিভিটায় অনেক কম চ্যানেল আসত। এটায় অনেক বেশি। তখনও ডিশ বা সেটটপ বক্সের যুগ আসেনি। ফলত আজকের মত হাজারখানা চ্যানেল ছিল না, কিন্তু যা আসত তা অনেক। ধীরে ধীরে ডিসনি, পোগো, কার্টুন নেটওয়ার্কের সাথে পরিচয় হয়েছিল। খুলে গেছিল এক অবাক দুনিয়া।
যারা নব্বইয়ের দশকের শেষভাগে জন্মেছে তারা ব্যাপারটা ভাল বুঝবে। আসলে মুক্ত অর্থনীতির হাওয়া আর প্রযুক্তি বিপ্লবের ছোঁয়া সবে লাগতে শুরু করেছে আমাদের দেশে। টেলিভিশন ছিল তখন প্রধান বিনোদন। তো সেই কল্পনার দুনিয়ায় চিরকালীন টম অ্যান্ড জেরি ছাড়াও আরও এমন অনেক কার্টুন ছিল যা আজ আর সেরকম দেখতে পাওয়া যায় না। এর মধ্যে ছিল অসওয়াল্ড, নডি।
মনে আছে একদিন ডিসনি দেখতে দেখতে একটা কার্টুনের সন্ধান পাই। আগে অ্যাড দেখাতো দেখতাম, কিন্তু তার আগে কোনদিন দেখা হয়ে ওঠেনি। গল্পটা বেশ অদ্ভুত, একটা বাচ্চা ছেলে সে খালি সমস্যায় পড়ে, সে দুর্বল। আর তাকে সাহায্য করে এক ভবিষ্যতের এক রোবট। হ্যাঁ ঠিকই ধরেছেন ডোরেমন। কেন জানিনা অল্পদিনের মধ্যেই কার্টুনটা বেশ পছন্দের হয়ে উঠেছিল। হয়তো কোথাও আমরাও নিজেদের জীবনে নবিতার মতোই। হ্যাঁ হয়তো আমরা ওর মতো অতটা বোকা নই, কিন্তু কোথাও আমরাও নিজেকে অনেকটা অসহায় মনে করি। সত্যি যদি এই রকম কেউ একটা ত্রাতা থাকত। আজ জানি এটা সম্ভব নয়, কিন্তু ভাবতে বড় ভাল লাগে। হয়তো আমাদের প্রত্যেকের জীবনের অপূর্ণ স্বাদগুলো পূরণ করতে এই রকম একটা কেউ এলে ভাল হত। সত্যিই তো কত স্বাদ অপূর্ণ থেকে যায়। অনেক সময় সেগুলো চাপা পড়ে যায় কিম্বা জীবনে চলেতে গেলে চাপা দিয়ে রাখতে হয়। হয়তো সে ইচ্ছা গুলো বড় তুচ্ছ, কিন্তু সেই মুহূর্তে ওগুলোই ছিল সোনার চেয়ে দামি। আর কোনদিন হয়তো সেগুলো পূরণ হবেনা। কত অপূর্ণ স্বাদ মনে পড়ে, সেই সুন্দর দেখতে রঙ পেন্সিলের বাক্স বা সেই মজার কমিক্সটা, দোকানে দেখেছিলাম, কিন্তু কোন কারণে কেনা আর হয়নি। আজও থেকে যায় অনেক ইচ্ছা মনের গভীর স্থানে। কোন এইরকম বন্ধু পেলে হত যে পূরণ  করতো  এইসব ইচ্ছা। আজও বড় হয়ে মনে হয়, ওই দিন গুলোতে ফিরে যাই। যদি পেতাম ডোরেমনের টাইম মেশিনটা। 
জীবনের সমস্যায় আজও পড়ি, ভবিষ্যতেও পড়ব। কিন্তু সে সমস্যা থেকে মনে মনে একটু হাঁপ ছেড়ে বাঁচা যায়, যখন সেই ছোট বেলার স্মৃতিগুলো মনে পড়ে। আসলে আমরা প্রতেকেই বাঁচি সেই শৈশব স্মৃতির অন্বেষণ করে। এই শৈশব স্মৃতিটায় হয়তো ডোরেমন, যা ক্ষণিকের জন্য হলেও বাস্তবটাকে ভুলিয়ে মনটাকে ভাল রাখে, শক্তি যোগায় আবার নতুন করে কাজে ঝাঁপানোর। ডোরেমন কোনদিন হারতে শেখায়নি। শত বিপদের মধ্যেও নবিতাকে সে বাঁচতে শিখিয়েছে। আমাদের দেশ ভারতবর্ষ, অমর্ত্য সেন বলেছেন ফার্স্ট বয়দের দেশ। যেখানে সব রোশনাই ফার্স্ট বয়দের নিয়ে। তারা বড় ইন্সটিটিউশনে পড়বে, সম্মান পাবে, আর শিক্ষান্তে যাদের অধিকাংশ দেশ ছাড়বে কারণ এখানে সেরকম প্রস্পেক্ট নেই। কিন্তু এদেশে পড়ে থাকবে নবিতারাই। যারা পিছিয়ে পড়েছিল কিন্তু হারেনি। তাদের নিয়ে কেউ সেলিব্রেট করেনি, তবুও তারা আছে। আর তাদের জন্য আছে ডোরেমনরা আশা ভরসা যোগাবে তাদের। 
তাই আজও ঘুমের মধ্যে কেঁদে উঠি এই বলে - যে আমার ডোরেমন চাই।
আর মন বলে এই তো আমি, কেন কাঁদ বন্ধু আমি তো ছেড়ে যায়নি। আমরা এক সাথে ভবিষ্যতটা দেখব। একসাথে হাসব। এই তো আমি।
সত্যি এই জন্যই আমার ডোরেমন চাই। 

Thursday, 14 June 2018

ইতিহাস ও আমি

মনে পড়ে সেই সময়ের কথা, মাধ্যমিকের রেসাল্ট বেরিয়েছে সদ্য। রেসাল্টটা বেশ ভালই হয়েছিল, অন্তত লোকে তাই বলেছিল। সারাদিন স্তুতি বাক্যশুনে মুখের মধ্যেও একটা হাসি খেলে গেছিল কোথাও। চেষ্টা করেছিলাম মুখটাকে যথা পূর্বক গম্ভীর রাখতে, কিন্তু পারিনি। যাক গে স্কুলে গেলাম তারপর আসল রেসাল্টটা আনতে। সেখানে গিয়েই তারপর স্যরেরা অনেকেই ভাল বলল, আর তারপর যে প্রশ্নটা ছুটে এল সেটা হল, সাইন্স নিচ্ছ তো? এটা একটা ব্যাধি কি না জানিনা, কিন্তু এ বঙ্গে ছেলে মেয়েরা রেসাল্ট ভাল করলে তাকে সাইন্স নিতেই হয়, নাহলে মান থাকে না। আমি অবশ্য কোনদিন মানের কথা ভাবিনি। তবুও সাইন্স নিয়েছিলাম। অবশ্য সাইন্স নেওয়ার প্রস্তুতি মাধ্যমিকের পরীক্ষা শেষ হওয়ার পরই নিতে হয়েছিল। মানে সবাই নেয় আরকি। তবে পরীক্ষার পর এ নিয়ে অনেক ভাবনা চিন্তা করেছিলাম। কি নেব? কি পড়ব? তা শেষ পর্যন্ত গড্ডলিকা প্রবাহেই গা ভাসিয়েছিলাম।

এরপর এসে গেছিল সেই ভর্তির দিনটা। নিজের স্কুলেই দ্বিতীয়বার আবার ভর্তি হলাম। সেদিন খুব মজাও হয়েছিল। কিন্তু ভাবনাটা তখনও যায়নি, ঠিক করলাম তো? পারব তো?

একজনই মাত্র আমাকে প্রশ্ন করেছিল শুধু, তাও সেটা অনেক পরে অবশ্য, কিন্তু করেছিল। আমার এক সহপাঠীর ভাই, নাম অভিজ্ঞান। ও আমাদের স্কুলেই পড়ত, আমার থেকে কয়েক ক্লাস নিচুতে। তো স্কুলেই দেখা হতে ও প্রশ্ন করে, সবুজ দাদা তুমি ইতিহাস নাওনি?

ইতিহাস - আমার প্রিয় সাবজেক্ট কি না জানিনা, কিন্তু বেশ ভালোই লাগত পড়তে। মাধ্যমিকে ইতিহাসে ৯৫ পেয়েছিলাম, এখনও মনে আছে। এখনকার মত এত এমসিকিউ প্রশ্ন থাকত না তখন, ফলে নম্বরটা তোলা সহজ ছিল না। বড্ড ভাল লাগত পড়তে। অনেকে ইতিহাস সম্বন্ধে অনেক কথা বলে, যে বাজে সাবজেক্ট। কোন লজিক নেই, শুধু সাল তারিখের সালতামামি। কিন্তু আমার বড় ভাল লাগত, কি সুন্দর গল্পের মত একটা জিনিস। তবে সত্যি কথা বলতে কি, লজিক সব জায়গায় খোঁজা যেত না, আর খুঁজতামও না। শুধু জীবন আর চারপাশের সাথে মিলিয়ে দেখতাম মিলছে কি না। মিললে বুঝতাম ইতিহাস ঠিক। না মিললেই প্রশ্ন তুলতাম। আসলে ইতিহাসের গল্প গুলো পড়তে পড়তে কোথাও একটা হারিয়ে যেতাম, মন যেন টাইম মেশিন হয়ে যেত। মনে হত এই তো আনন্দ, এটাই জগৎ।

আমার এক মাসতুতো দিদির একটা উচ্চমাধ্যমিক স্তরের ইতিহাস বই ছিল, বইটা নিয়ে এসছিলাম পড়ব বলে। পড়েও ছিলাম পুরোটা।

আমার ইতিহাস মানে কিন্তু শুধু প্রাচীন কালের রাজারাজড়া নয়, আধুনিক ইতিহাসও ভাল লাগত। যাতে রোমান্টিসিসম কম, আর ক্রুরতা বেশি। কিন্তু কি জানি, রাজনৈতিক পট পরিবর্তন গুলো কি রকম থ্রিলিং লাগত। লোকে আজকাল পলিটিকাল থ্রিলার পড়ে, কিন্তু আমার কাছে ওগুলোই থ্রিলার ছিল। তবে একটা ব্যাপার, আমি ইতিহাস কে কোন দিন একদিক দিয়ে দেখিনি, মানে ওই পরীক্ষার আসা প্রশ্নের মতো, যেমন বলা হত আকবর কেন মহান, গুপ্তযুগকে কেন স্বর্ণযুগ বলা হয়, এই রকম আরকি। আমার কাছে মহানত্বের থেকে বড় ছিল সত্যিটা। মানে যেটা বলা হয় সেটা সত্যি কি না। এর জন্য অনেক বইও পড়তাম, সব বুঝতাম না অথচ পড়তাম। গল্পের মত পড়তে ভালই লাগত। আমার কাছে ওগুলো গল্পের বইয়ের মত ছিল। আসলে আমার মনে হয় আমার শুধু একার নয়, ওই সময় আমাদের স্কুলের দীর্ঘ সময় ধরে পরপর কয়েকটি ব্যাচের কিছু সংখ্যক ছেলেদের মনে ইতিহাস বাসা বেঁধেছিল। তার একটা কারন ছিল, আমাদের স্কুলের একজন ইতিহাস শিক্ষক, নন্দন কুমার বসু। তিনি অবশ্য ইতিহাস নিয়ে পড়তে চাননি না কি কোনদিন। কিন্তু ভাগ্যের ফেরে তাকে ইতিহাস নিতে হয়, আর সেই লোকটিই ইতিহাস-প্রীতি ধরিয়েছিলেন বছরের পর বছর হাজার ছাত্রের মনে। তবে আমার ইতিহাস-প্রেম শুধু ওই কারণেই ধরেছে এটা বললে অত্যুক্তি হবে। আসলে আমার মধ্যে জানার একটা উদগ্র বাসনা ছিল, মানে আজও আছে। যা কিছু অজানা স-অ-অ-ব জানবো। অনেকটা অভিযাত্রীর মতো, বইয়ের থেকে তার বাইরের জগতে আকর্ষণ বেশি ছিল, আছে থাকেবে। কোন একটা বিষয় নিয়ে থেমে থাকতে ভাল লাগে না। কিন্তু সমস্যা হল আমি তো আর অসীমপ্রতিভা ধর নই, তাই সব কিছু পড়া সম্ভব হল না। একসাথে তাল দিতে পারলাম না। কিন্তু ইচ্ছা, সেটা যাবে কোথায়। মনের মধ্যে বারবার ধাক্কা দিয়েছে। যতবার ইলেভেন-টুয়েলভে ক্যালকুলাস নিয়ে সমস্যায় পড়েছি, অঙ্ক কিছুতেই মাথায় ঢোকেনি, বারবার মনে হয়েছে ছুটে যায় ইতিহাসের কাছে। আজকাল তো আর্টসে নম্বর পাওয়া সোজা হয়ে গেছে, গেলেই ভাল হত। এই মনে হয়েছে বারবার। কিন্তু যেতে গিয়েও পারিনি। প্রথমত নিয়মের বেড়াজালে, আর তার থেকেও বড় হল জীববিদ্যার মায়া কাটিয়ে যাওয়া। আসলে ইতিহাসের মতো এও আমার আরেক ভাললাগা। আর একেও লোকে কম দুর্নাম দেয় না। এটাও মুখস্ত করার বিষয় বলে কি না লোকে তাই। তা লোকের কথায় কান দেই নি, কিন্তু তা বলে ইতিহাসের অমোঘ আকর্ষণ এড়াতেও পারিনি। তবে এই দ্বন্দের মাঝে একটা কাজ হয়েছে, এর মাধ্যেমে আমি বুঝে গেছিলাম আমি কি চাই। আসলে আমার স্বপ্নটা একজন পলিম্যাথ হওয়ার। হ্যাঁ, পলিম্যাথ - অনেক কিছু জানে যে। ভেবে দেখলাম সত্যই তো তাই, বিজ্ঞানের পাশাপাশি পুরাণেও আগ্রহ আমার। সেই লক্ষেই এগিয়ে যেতে চেষ্টা করি, আরও একটা ব্যাপার খেয়াল করেছিলাম, যে বিজ্ঞান পড়লে ইতিহাস নিয়ে, সাহিত্য নিয়ে চর্চা করাই যায়। কিন্তু উল্টোটা হয় না, কেন জানি না এ এক অদ্ভুত নিয়ম। দেখবেন অনেক কবি সাহিত্যিক বিজ্ঞানের লোক। কবি নিকোনা পাররা ছিলেন অঙ্কের অধ্যাপক, আলেকজান্ডার সলঝেনিতসিনও ছিলেন অঙ্কের লোক। তবে সবচেয়ে অবাক হয়েছিলাম এটা জেনে। যে বাংলাদেশের প্রখ্যাত সাহিত্যিক হুমায়ন আহমেদ রসায়ন বিদ্যার লোক ছিলেন। মনে মনে ভাবলাম, পলিমার নিয়ে পিএইচডি থিসিস লেখার পরও যদি কেউ অমন শিল্প সাহিত্য সৃষ্টি করতে পারে, তো সবই সম্ভব। তারপর আস্তে আস্তে যখন আরও জানতে শিখলাম, অনেক লোকের সাথে পরিচয় হল তখন দেখলাম, যে অনেকেই বিজ্ঞানের লোক, কেউ আইটি ইঞ্জিনিয়ার, কিম্বা কেউ বিজ্ঞানী। তবুও এরা আপন খেয়ালে নিজের সৃষ্টিতে মগ্ন। আসলে বুঝলাম গোটাটাই এক, সৃষ্টি আর স্রষ্টার লীলা খেলা মাত্র। আমারা নিজের শুধু দাগিয়ে দিয়েছি, এটা ইতিহাস, এটা বিজ্ঞান, এই বলে। আবার চাইলাম ইতিহাসের দিকে ফিরে দেখলাম, দেখলাম সত্যি তো এভাবে কেন দেখি না জীবনটাকে। সবটায় তো যুক্তিবাদী মনের খেলা, সে ইতিহাস পড়ি আর বিজ্ঞান। যুক্তি দিয়ে বিচার করাটায় আসল। ঐতিহাসিকরা তো আসলে গোয়েন্দা, সূত্র ধরে ধরে ঘটনার পুনর্নির্মাণ করে চলেছেন। আর বিজ্ঞানীরা এটাই করেন, পরীক্ষার ফল দেখে বোঝার চেষ্টা সত্যিটাকে। আসলে তো আমরা সবাই আবিষ্কারক, খুজে চলেছি অরূপ রতন জীবনের খনি থেকে, যে যার নিজের মতো করে। আস্তে আস্তে নিজেকে জানলাম। পুরো জানা কখনও যায় না, তাই অনুসন্ধান চলছে। ইতিহাস তো সেটাই যা অতীতচর্চার মাধ্যমে নিজেকে জানা। নিজের শিকড়কে জানা। তাই বারবার মন চলে  যার ইতিহাসের কোলে, মাথা রেখে ঘুমোতে ইচ্ছা করে, আর মনে হয় আবার সেই টাইম মেশিন চড়ে বেরিয়ে পড়ি মানস ভ্রমণে।

বহুদিন হল ব্যস্ত জীবনের ফাকে আর ইতিহাস পড়া হয় না, সেই যে পাঠ বন্ধ করেছিলাম আর খোলা হয় নি। খুলব একদিন, খুলতে হবেই, এই আশা নিয়েই থাকি।

একদিন সত্যি ফিরে যাব ইতিহাসের কাছে।

Tuesday, 12 June 2018

ভাগাড়ের মাংস ও বাঙালি

কদিন আগে চারিদিকে ভাগাড়ের মাংস নিয়ে হইচই পড়ে গেছিল। তা সেই দেখে একটা পুরাণের একটা গল্পের কথা মনে পড়ল। একবার দুর্ভিক্ষের সময় বিশ্বামিত্র মুনি খাবার না পেয়ে চন্ডালদের বাসস্থানে ঢুঁ মেরেছেন। কিন্তু সেখানে ঢুকতেই চন্ডালরা তাকে চোর ভেবে ধরে ফেলে, এবার ধরে তো এই মারে তো সেই মারে। এমতাবস্থায় মুনি তো কোনক্রমে তাদেরকে বোঝানোর চেষ্টা করে, অবশেষে তারা মুনির কথা শুনতে রাজি হয়। চন্ডালরা তার কথা শোনার পর তো তাকে পায়ে ধরে বাবা-বাছা বলে ক্ষমা চায়, এই যদি মুনিঋষি কোন শাপ দিয়ে দেন। কিন্তু মুনি শাপ দেবেন কি, তার পেটে তখন ছুঁচোয় ডন দিচ্ছে। উলটে তিনিই চন্ডালদের কাছে খাবার চেয়ে বসেন, একথা শুনে চন্ডাল বলে তারা তো কুকুরের মাংস খায়, এ মাংস কি মুনিবর খাবেন? মুনিবরের তখন যায় যায় অবস্থা। কিছু পেটে পড়লে বাঁচেন। তিনি বললেন - আরে তাই দাও, আমি মন্ত্রবলে কুকুরের মাংস অমৃত করে নেব।
তো তারপর বিশ্বামিত্র সেই কুকুরের মাংস মন্ত্রবলে অমৃততে পরিণত করেন, শুধু তাই নয় দেবতাদের উদ্দেশ্যে নিবেদন করেন, আর দেবতারা তা গ্রহণও করেন। তারপর সেই প্রসাদ সবাই খায়।
কে জানে আজকালকার রেস্তরার রাঁধুনিগণ হয়ত বিশ্বামিত্রের সেই ফর্মুলা জেনে গেছেন। আর তা দিয়েই কুকুরের মাংসকে অমৃত করে তুলছেন। তবে বাঁচোয়া এই যে আমাদের নেতাগণ এই পৌরাণিক কাহিনি জানেন না, জানলে আর রক্ষে থাকত না। গনেশের মাথার প্লাস্টিক সার্জারির মতো ভাগাড়ের মাংসের এই জাস্টিফিকেশন খুজে বের করতেন।
কিন্তু পুরাকালে না হয়, দুর্ভিক্ষ চলছিল। কিন্তু এখন তো সেরম কিছু ঘটেনি, তবুও আমবাঙালি ঘরের খাবার ছেড়ে দিয়ে ভাগাড়ের মাংসের দিকে চলছিল। কেউ কেউ বলবেন, এসবই পণ্যায়নের যুগের ফল। ওপরের চাকচিক্য দেখে সবাই ছুটছে, ভিতরে কি আছে দেখার দরকার পরে না।
তবে কি শুধুই তাই? তাহলে এরকম ঘটনা অন্য কোথাও ঘটছে না কেন? সরকারি প্রতিনিধিরা বলবেন, হয় হয়। জানতি পারো না। তারা আছেন বলেই এসব না কি ধরে পড়ছে, অন্য কোথাও হলে না কি সেটাই হতো না। কিন্তু একটা ব্যাপার স্পষ্ট নিম্নমানের জিনিস বাঙালি খেয়ে চলছিল, অথচ যতক্ষণ না বাইরে থেকে বলা হল সে খাওয়া থামায়নি। শারীরিক স্বাস্থ্য ব্যাপারটা না হয় ডাক্তারি পরীক্ষায় মাপা যায়, কিন্তু মানসিক স্বাস্থ্যের ব্যাপারটা মাপবে কে? খাদ্যরুচির মতো অন্যান্য রুচিও কি ডুবে যাচ্ছে। খেয়াল করবেন টিভির সান্ধ্য আড্ডার আসর গুলি। সেখানে একজনের মত অন্য জনের মতকে দাবিয়ে দেওয়ার চেষ্টা, যুক্তির ধার এনারা ধারেন না। যার গলার জোর যত, সেই জেতে। অথচ মানুষ এগুলোই রোজ গিলছে। আর বাংলা সিরিয়ালের কথা না বলাই ভাল। আরও ভাল বোঝা যায় বিভিন্ন ফেসবুকের লেখা থেকে। আজকাল তো সবাই সাহিত্যিক। তো দেখবেন নামী সেলিব্রিটির লেখা ছাড়া যেগুলো বেশি লাইক পায়, শেয়ার হয়, সেগুলো মূলত সস্তা প্রেমের গল্প, না হয় নিম্ন রুচির জোকস ও মিম। এটাই এখন ট্রেন্ড। ইউটিউব ভিডিও বানাতে চান, তো গুচ্ছের গালাগালি দিন আপনি ফেমাস হবেন।
মাঝে মাঝে মনে হয় সীস্যারোর মতো বলে উঠি "ও টেম্পোরা ও মোজ়"। তবে এটাও ঠিক এ জিনিস বাঙালির আজ নয়, চিরকাল হয়েই আসছে বলে বোধ হয়। হুতোম পেঁচার নকশায় দেখবেন, বাঙালির বাবু কালচারের বৃতান্ত। কতটা নিচে নামতে পারে রুচি। মাইকেল মধুসূদন থেকে রবীন্দ্রনাথ সবাই এ নিয়ে কটাক্ষ করেছেন। সপ্তকোটী বাঙালি আর মানুষ হল না বলে দুঃখ করেছেন।
তাই এ দেখেই ভরসা হয়, সব শেষ হয়ে যায়নি, আর যাবেও না। সেইকালে যদি এতকিছুর মধ্যেও ঐরকম সব বিখ্যাত সৃষ্টি হতে পারে, তো আজও হতে পারবে। আর সময়ে দাঁড়িয়ে সময়কে বিচার করা যায় না, আর আমিই বা কে বিচার করার।
তাই তো বলি সমাজ সমাজের মতোই চলবে, কিন্তু তার মধ্যে থেকেই সৃষ্টি হবে ভাল কিছুর, যেমন পাঁকে পদ্ম ফোটে।

এই ভরসা নিয়েই তো বেঁচে থাকা।
চলুক এ জীবন।

Thursday, 7 June 2018

সন্ধ্যাবেলায় একলা ছেলে

ঝড় উঠেছে
বাড়ির টগর গাছটা প্রচন্ড জোরে দুলছে ,
পশ্চিমের আকাশটা আসন্ন প্রসবা মোষের মতো হয়ে আছে
জানালা দিয়ে বাইরে দেখি চারদিক যেন ওলট পালট হয়ে যাচ্ছে
হঠাৎ মোবাইলটা বেজে উঠল 
বিতনু ফোন করছে
জানি এটা বৃষ্টির মধ্যে ফুটবল খেলার আমন্ত্রণ
তাই ফোনটাকে বেজে দিতে দিলাম
ভাল লাগছে না কিচ্ছুটি
মনটা যেন গ্রীষ্মের তপ্ত দুপুরের পর অবসন্ন বিকেল
মনও যেন একটা ঝড় চাইছে
ঝরা যত পাতা জমে আছে হৃদয়ের গভীরে
উড়ে যাক সবকিছু
জমাট বাঁধা অন্ধকারগুলো সব ভাসিয়ে দিতে ইচ্ছে করছে
হঠাৎ একটা দুম করে শব্দ
মানুদের বাড়ির নারকেল গাছটা ঝড়ের তোড়ে ভেঙে পড়ল
কেন যে মনের অবাঞ্ছিত দেওয়ালগুলো এভাবে ভেঙে পড়ে না
তাই ভাবি মাঝেমাঝে
এমন সময় ঝমঝমিয়ে বৃষ্টি নামল
আমার মনের কোনের ময়ূরটাও পেখম তুলেছে
এইবার ভাসিয়ে নিয়ে যাক তো মনের গহনের সব জমা জল আর কান্না
আজ ভিজতে ইচ্ছে করছে
এই বারিসিঞ্চনে যেন অঙ্কুরিত হোক নতুন সৃষ্টির বীজ
বৃষ্টির ছাটেতে ভিজে যাচ্ছে চোখ-মুখ
এক অদ্ভুত শীতলতা আবিষ্ট করছে হৃদয়কে
মনকে নাড়া দিচ্ছে নতুন কিছু স্বপ্ন
আকাশকে ছুঁতে চাইছে মাটির কাছে থেকেও ।
বৃষ্টি থেমে গেছে
সন্ধ্যা নেমে এসেছে
মা ডাকছেন
যাই এবার পড়তে বসি ।

স্বপ্ন সন্ধান

ওরে আজকে ডাক এসেছে
মেঘমল্লারের দেশ থেকে
তাড়িত ধ্বনি আর খুঁজবে না
হারিয়ে যাওয়া নিস্তব্ধতাকে
হাওয়ার তালে মাতবে আজ
এগিয়ে যাবে নীরবের নিরবচ্ছিন্নতাকে ছিন্ন করে
মনের গহন অরণ্যেতে
কাজলচোখা সেই হরিণী
ছুটে চলবে কল্লোলের কলরবে ।
আয় আজকে আমরা সবাই মিলে
ভাসাই চল কাগজের নৌকো
ফিরে যাই ছোট্টবেলায়
সাজাব ঘর নতুন করে
লুপ্ত হৃদয়ের বাঁশি যে আজ
বাজছে যেন নতুন সুরে ,
ওই দেখা যায় নীল আকাশ
সাজিয়ে কত মেঘের পসরা
সবার জন্য মেঘ আজকে
আনবে নতুন বারিধারা ।
সাঁঝবেলাতে উঠবে তারা
গল্প বলবে রূপকথার
লুকিয়ে থাকা দুঃখগুলো
জমবে না আর মনের ভিতর ।
তাই , আজকে হৃদয় মানছে না আর
কোনো বাধার বাধ্যবাধকতা
বলেছে যেন , আয় চলে আয়
সবাই মিলে খেলব মোরা
হারিয়ে যাওয়ার খেলাঘরে ।

Sunday, 3 June 2018

পুনর্জন্ম

পুনর্জন্ম বলে কি কিছু আছে ? যদিবা থাকে বুঝব কি করে ? জানা যাবে কি করে যে এইটেই দ্বিতীয় জন্ম ? - এই রকম সাত পাঁচ ভাবতে ভাবতে টেবিলে মাথা রেখে চুপ করে বসে ছিল অমলকিশোর।
মাথার অপর সিলিং ফ্যানের ঘোরার আওয়াজ ছাড়া গোটা ঘর নিস্তব্ধ বলা চলে। ফ্যানটাও যেন সারাদিন চলে চলে ক্লান্ত হয়ে পড়েছে। ঘুরছে বটে কিন্তু হাওয়া সেরম লাগছে না, আর লাগলেও তাতে গরম যাচ্ছে না। আজ অবশ্য গরম ছিল বেশ, বেলা থেকেই আকাশটা মেঘলা ছিল, কিন্তু বৃষ্টি আসেনি, একটু দমকা হাওয়া ছেড়েছিল সাড়ে পাঁচটা নাগাদ কিন্তু তাও সেই ক্ষণিকের জন্যই। ফলে কি রকম একটা গুমোট ভাব আছে এখনো।
অমলকিশোরের পুরো ব্যপারটাই এখন গা সওয়া হয়ে গেছে। সে ভেবে দেখেছে যতক্ষণ মানুষের কোনো বড় সমস্যা থেকে তখন ছোট গুলো খুব একটা ম্যাটার করে না। যেমন যাদের পেটে খিদে - ওই ফুটপাত বাসী মানুষগুলো, তাদের কাছে দৈনন্দিন জীবনের পথ চলতি সমস্যা গুলো যেন সমস্যা নয়। এক তুড়ি মেরে সব উড়িয়ে দেয় যেন। কাল যদি তাদের অন্ন সমস্যা মিটে যায় তখন অন্য আরো সমস্যা শুরু হবে। সমস্যাও কি রকম আকাঙ্ক্ষার মতো, আকাঙ্ক্ষা যে রকম পূরণ হতে চায় না সমস্যাও সেরম ফুরোতে চায় না। তবে অমলকিশোর সমস্যার সমাধানের পথ খোঁজার চেষ্টা না করে বিকল্প রাস্তা খুঁজে ফেরে সব সময়। তাই এখন ভাবছে যদি আবার সব নতুন করে শুরু করা যেত। অন্তত এই সমস্যা গুলোতো থাকতো না। আসলে প্রতিবার সমস্যা থেকে পালানোর সময় সে এটাই ভাবে, কিন্তু দেখে ঘুরে ফিরে সে একই জায়গায় এসে পড়েছে। ছোট বেলায় শোনা রূপকথার গল্পে সেই ভূতের জঙ্গলের মতো জীবনটা। মাইলের পর মাইলের গিয়েও আবার একই জায়গায় এসে উপস্থিত হয় সে। তবে রূপকথার গল্পের শেষে সেই ভূত থেকে মুক্তি ছিল, ছিল জাদু কাঠির ছোঁয়া। সেই রকমই জাদু কাঠির অপেক্ষায় সে বসে আছে। সে জানে এসব কল্পনা করা অবান্তর, তবুও ভাবতে ভালো লাগে।
গরমকাল চারদিক নিস্তব্ধ, দূর থেকে একটা গানের সুর ভেসে আসছে। কি গান সে মনে করতে পারছে না কিন্তু সুরটা বড্ড চেনা লাগছে। গানের সুরটা অমলকিশোর গুনগুন করে যাচ্ছিল মনে মনে। তার মনে পড়ে গেল ছোট বেলার কথা, কত মজাই না হয়েছিল। ব্রতীন, পুস্পেন, সলিল এরা কোথায় আছে এখন। বিদ্যুৎটার সাথে গত বছর পুজোয় দেখা হয়েছিল মহম্মদ আলি পার্কে। কত না দুষ্টুমি করেছে এককালে, পূর্ণেন্দু বাবুর সাইকেলের চাকার হাওয়া খুলে আর সিটে আঠা লাগিয়ে দিয়েছিল পুস্পেন। সলিলের নতুন জামায় কাটাকুটু খেলেছিল ব্রতীন আর অশোক। সে কি হুলুস্থুলু কান্ড, আজকাল অবশ্য এসব মনে পড়লে হাসি পায়। কি পাগলামি না করেছে এককালে, ইচ্ছে করে আবার সেই দিন গুলোতে ফিরে যেতে। কিন্তু হবে কি করে? এতো ওয়ান ওয়ে রাস্তা, অন্তহীনের পথে যাত্রা করেছে, শেষ হয়েছে মৃত্যুতে। নাকি তাতেও শেষ হয় না? এসব সাত পাঁচ ভাবতে ভাবতে আরও একটা ঘন্টা কেটে গেল। দুচোখে ঘুম নেই, মাঝে মাঝে মনে হয় ঈশ কেউ যদি ঘুম পাড়াত, পরম ভালবাসায় মায়ের মতো করে। মাঝে মাঝে এই একাকিত্বটা কে বেশ অসহ্য লাগে। মনে করে সে একদিকে আর জগতটা অন্য দিকে। তবুও এতো মানসিক কষ্টের মধ্যে ভেসে আশা গানটা মনটাকে ভরিয়ে দিচ্ছিল, যেমন করে বৈশাখ মাসে বৃষ্টির আগে বিদ্যুৎ ঝলকে উঠে ভরিয়ে দেয় গোটা আকাশটাকে, ঠিক তেমন করে। কিন্তু বৃষ্টি নামতে দিল না সে, তার আগে নিজেকে সংযত করে নিলে। খুব কান্না পেল, মনে হল একছুটে চলে যায়, যে দিকে দু চোখ যায়, কিন্তু ঐ- বিধি বাম। যাক গে এতো সব ভাবতে ভাবতে অমলকিশোর টেবিল থেকে উঠে বিছানায় গেল, লাইট নিভিয়ে ঘুমোবার চেষ্টা করবে বলে। কিন্তু ঘুম এল না, বদলে চোখের কোনায় জল এল। মনে মনে নিজেকে ধিক্কার দিচ্ছিল, সত্যি তো কর্ম না করে সে ফলের আশা করে কি করে। মাঝে মাঝে মনে হয় তার সে কিসে বিশ্বাস করে- কর্মে না ভাগ্যে ? তবে যাতেই করুক না কেন দুটোর জন্যই টিকে থাকতে হবে। লড়াই তো করতেই হবে।
বাইরে বৃষ্টি নামল হঠাৎ। বৃষ্টির ছাট জানলা দিয়ে আসছিল বটে, কিন্তু অমলকিশোর জানলা বন্ধ করল না। কি রকম একটা উদাস লাগছিল তার। আর কিচ্ছু ভাবতে ভাল লাগছিল না তার। আসলে হঠাৎ হঠাৎ করে এই রকম হয় তার, কোনো ঠিক থাকে না। যখন মন ভারী হয়ে উঠে তখনই এই সব ভাবনা এসে ভীড় করে আরে, আর কান্নারা পাড়ি জমায় তাদের সাথে।
অমলকিশোর কাঁদছে......

অনেকক্ষণ যাওয়ার পর কান্নার স্রোত কিছুটা কমলে, আবার ভাবতে চেষ্টা করলো সে। এখন অনেকটা ভাল লাগছে। তার সাথে বাইরে থেকে জানলা দিয়ে হাওয়াও আসছে, আগের মতো আর গরম লাগছে না। বৃষ্টির তেজটাও কমেছে। অমলকিশোরের মনে হল, ধুর কি হবে ভেবে। যা হবার হবে, খুব বেশি হলে সে কিছু হারাবে, নিঃস্ব হয়ে তো আর যাবে না। আর যদি হয়েও যায়, তখন ওই গরিব মানুষগুলোর মতো হয়ে যাবে, পেটের জ্বালায় তখন তো এই সমস্যা গুলো আর থাকবে না। ধুর ধুর যা হবে হবে।
হঠাৎ মোবাইলটা টং করে বেজে উঠলো। কোনো মেইল এসেছে বা অন্য কোনো নোটীফিকেশন ঢুকলো বোধহয়। খুব একটা ইচ্ছে না থাকেলেও সে সেটা হাতে নিল, অবশ্য অন্য কেউ হলে নিত না। কারণ মোবাইল গুলো একেকটা প্যান্ডোরার বাক্স। খুললেই সমস্যা শুরু। তবুও অমলকান্তি খুলল। কি একটা ফালতু মেইল, ওই you have an offer গোছের। কিন্তু তারপরেরটা ...... মেইলটা দেখে লাফিয়ে ওঠে আর কি সে। আরে এতো সেই 'লেখনী' তে যে কবিতাটা পাঠিয়ে ছিল, সেটা গৃহীত হয়েছে বলে লেখা আছে। মাঝে মাঝে ছোট ছোট খুশি গুলো তার অনেক বড় কিছু সমস্যাকে হার মানায়। এক মুহূর্তে তার মনে হল এ জগতে সেই সবচাইতে খুশি মানুষ এখন। মোবাইলটা পাশে রেখে আনন্দে চোখ বুঝল সে। আবার নতুন করে সব কিছু শুরু করবে সে, কাল সকালে উঠে নতুন করে শুরু করবে জীবন। জীবন যে রকম সে রকম সে ভাবছে কেন, যে রকম হতে পারে সেটা ভাবা উচিত।
চোখ খুললো আর একবার, ঘুমোবার আগে একবার দেখে নিতে চাইল চারপাশটা। দেখল বৃষ্টি থেমে গেছে। সেই গুমোট ভাবটা আর নেই। আর হ্যাঁ, মেঘ সরে গেছে, আকাশ জুড়ে  তারা ভরে আছে।
                           
ঋণস্বীকার - মাল্যবান , জীবনানন্দ দাশ