Thursday, 19 July 2018

সেলফি কথা

আজকাল সেলফি তোলার খুব হিড়িক। অনুষ্ঠান থেকে বন্ধুদের সাথে আউটিং, সেলফি না তুললে আপনি ঠিক আধুনিক হতে পারলেন কই। শুধু তুললেই হবে না, ঘটা করে সেটা সোশ্যাল মিডিয়ায় আপলোড করতে হবে।
অক্সফোর্ড ডিকশনারির ২০১৩ সালে ওয়ার্ড অফ দ্য ইয়ার হওয়া সেলফি শব্দের সংজ্ঞা হল  “a photograph that one has taken of oneself, typically one taken with a smartphone or webcam and uploaded to a social media website.
বোঝ কান্ড, তার মানে এমনি সাধারণ ক্যামেরা দিয়ে নিজেই নিজের ছবি তুললে সেটা গ্রাহ্য হবে না। তাহলে সেটাকে কি বলব? উত্তর হল, সেটাকে বলব photographic self-portrait। সে যা যা বলুক গে, আমরা আপাতত নিজেই ছবি নিজের ছবি তোলাকে সেলফি বলে ধরে নিই তাহলে বিশেষ কিছু ক্ষতি হবে না। তো মাঝে মধ্যেই মনে প্রশ্ন জাগে যে প্রথম সেলফি কে তুলেছিল। 
কর্নেলিয়াসের তোলা প্রথম সেলফি 


অধিকাংশের মতে প্রথম সেলফি তুলেছিলেন রবার্ট কর্নেলিয়াস। উত্তর আমেরিকার ফিলাডেলফিয়ার এক অ্যামেচার রসায়নবিদ ছিলেন এই কর্নেলিয়াস। তো ১৯৩৯ সালের একদিন তিনি, তার বাড়ির দোকানের পিছনে ক্যামেরা বসিয়েছেন। কিন্তু ছবি তোলার জন্য কাউকে পাচ্ছেন না। শেষে নিরুপায় হয়ে নিজেই লেন্স ক্যাপ খুলে ক্যামেরার সামনে এক মিনিট বসে থাকলেন, তারপর লেন্স ক্যাপটা লাগিয়ে দিলেন। ডেভেলপ করার পর দেখলেন তার ছবি এসেছে। ছবির পিছনে আবার লিখলেন “The first light Picture ever taken. 1839.”
কর্নেলিয়াসে তোলা দ্বিতীয় সেলফি 







এই ছবি তোলার পরেও কর্নেলিয়াস আরেকটি ছবি তুলেছিলেন নিজের। সেটা প্রথম ছবি তোলার চার বছর পর। সেই ছবিতে দেখা যাচ্ছে কর্নেলিয়াস তার রসায়নগারে একটি বোতল ও একটি বিকার থেকে কিছু তরল ফানেলের মাধ্যমে অন্য একটি  বিকারে ঢালছে। এই ছবিটায় কর্নেলিয়াসের মুখ খুন একটা স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে না অবশ্য।





এরপর একটু বাংলায় ফিরে আসি। বাংলায় প্রথম সেলফি কে তুলেছিল তা নিয়ে মতভেদ আছে। স্পষ্ট করে কেউ কিছু জানে না। তবে সত্যজিৎ রায় তার যুবক বয়সে ক্যামেরার শাটারের সাথে সুতো বেঁধে তার মায়ের সাথে একটি ছবি তুলেছিলেন। অনেকে এটাকে বাংলায় প্রথম photographic self-portrait বলে দাবি করেন। 

সত্যজিৎ রায়ের তোলা photographic self-portrait
এরপর আসি মহাকাশে। মহাকাশে প্রথম সেলফি তোলেন বাজ অলড্রিন। ১৯৬৬ সালে জেমিনি ১২ অভিযানে তিনি মহাকাশে সাড়ে পাঁচ ঘণ্টা হাঁটার পর এই সেলফি তোলেন।

মহাকাশে প্রথম সেলফি 
এতক্ষন তো গেল মানুষে সেলফি তোলার কথা, শুনেছেন বাঁদরে সেলফি তুলেছিল। আজ্ঞে হ্যাঁ সত্যি। শুধু তাই নয় সেই সেলফির স্বত্বাধিকার নিয়ে মামলা পর্যন্ত হল।
তো হয়েছিল কি, ২০১১ সালে ইংল্যান্ডের ফটোগ্রাফার ডেভিড স্লটার ইন্দোনেশিয়ায় গিয়েছিলেন বন্যপ্রাণীদের ছবি তুলতে। সেখানে তিনি ছবি তুলতে এতই ব্যস্ত হয়ে পড়েন যে ভুলেই যান তাঁর আরও একটি ক্যামেরার কথা। ডেভিডের অন্যমনস্কতার সুযোগ নিয়ে নারুতো নামে এক ম্যাকাক বাঁদর ক্যামেরাটি নিয়ে খেলতে শুরু করে। একগাদা ছবিও তোলে বাঁদরটি। তার বেশির ভাগ ঝাপসা হলেও নিজের ঝাঁ চকচকে সেলফি তুলতে ভুল করেনি বাঁদরটি। এরপর বহু কায়দা করে ডেভিড তার ক্যামেরাটি হাতে পান। এ পর্যন্ত ঠিক ছিল সব কিছু।
এরপরে ‘ওয়াইল্ডলাইফ পার্সোনালিটিজ ‘নামক এক গ্রন্থে বাঁদরের সেলফিটি প্রকাশিত হয়। প্রকাশিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে উইকিপিডিয়ার প্রকাশক উইকিমিডিয়া ফাউন্ডেশন তাদের ওয়েবসাইটে এই অভিনব সেলফি প্রকাশ করে এবং ছবিটি নিয়ে হইচই পড়ে যায়। এখনও পর্যন্ত মানুষ ব্যাতীত অন্যকোনও প্রাণীর সেলফি এই প্রথম। ফলে স্বভাবতই এই নিয়ে উৎসাহ চরমে পৌঁছায়। কিন্তু উইকিমিডিয়ার উপর বেজায় চটেগেলেন ডেভিড। তার দাবি এই ছবির কপিরাইট তার। উইকিমিডিয়ার ওয়েবসাইট থেকে পৃথিবীর একমাত্র বাঁদরের সেলফি সরিয়ে নেওয়ার দাবি তুলেলন তিনি। মামলা গড়াল কপিরাইট আদালত অবধি। ডেভিডের যুক্তি, ‘ফটোগ্রাফি খুবই খরচসাপেক্ষ একটি শিল্প। ২০১১-তে ইন্দোনেশিয়া গিয়ে ছবি তুলতে গিয়ে আমার দু’হাজার ডলারের বেশি খরচ হয়েছিল। এ ছবির মালিক আমি। কারণ, ক্যামেরা আমার। বাঁদর শুধু ক্লিক করেছিল। ওই ছবিটির জন্য তিন বছরে প্রায় ১০ হাজার মার্কিন ডলার লাভ করতাম। সে সুযোগ বঞ্চিত হয়েছি’। অপরদিকে উইকিপিডিয়া ডেভিডের যুক্তি মানতে নারাজ। উইকিপিডিয়া কর্তৃপক্ষের যুক্তি হচ্ছে, সেলফি তুলেছে বাঁদরটি নিজে। তাই এই ছবির কপিরাইটে ডেভিডের কোনো অধিকার নেই।
শেষ পর্যন্ত উইকিপিডিয়া কর্তৃপক্ষের জয় হয়। কপিরাইট আইনে কোনও ছবির মালিকানা তাঁর উপর বর্তায় যিনি ক্যামেরার শাটার ক্লিক করেছেন। এক্ষেত্রে কিন্তু কাজটি করেছে ম্যাকাক বাঁদরটি স্বয়ং। অতএব সে যতদিন না এসে কপিরাইট দাবি করছে ততদিন সম্ভবত নিশ্চিন্তে থাকতে পারে উইকিপিডিয়া।

বাঁদরের তোলা সেই সেলফি 


এরপর আরেকটি মামলা করে পশুপ্রেমিক সংগঠন পেটা। তাদের দাবি, ওই সেলফি-র কপিরাইট ম্যাকাক বাঁদরটির।
যুক্তি হিসেবে বলা হয়েছে, ফটোগ্রাফার শুধু ক্যামেরাটি রেখেছিলেন। কিন্তু সেলফি তোলার কৃতিত্ব ইন্দোনেশিয়ার দ্বীপ সুলাওয়েসির ৬ বছরের ম্যাকাক মাঙ্কি নারুতোর। তাই ওই ছবি থেকে প্রাপ্ত যাবতীয় অর্থ নারুতো ও ওই সংরক্ষিত অরণ্যে বসবাসকারী তার প্রজাতির অন্যান্যদের জন্য ব্যয় করার আর্জি জানিয়েছে পেটা। এই মামলার রায়েও ডেভিড হেরে যান, আদালত রায় দেয় ওই সেলফিটি থেকে বা সেটিকে বিক্রি করে যা আয় তিনি করেছেন তার ২৫ শতাংশ ওই প্রজাতির বাঁদরের সংরক্ষণে ব্যয় করতে হবে।
বেচারা ডেভিড, কে জানত একটা ছবির জন্য এতো ঝামেলা হবে তার।

4 comments:

  1. প্রথম সেলফি নিয়ে এত কিছু ঘটনা ঘটেছে তা জানতে পেরে সত্যিই খুব অভিনব লাগল। তোর পরিশ্রমের সমাদর রইল।

    ReplyDelete
  2. सेल्फ़ी फोटोग्राफी से सम्बंधित रोचक जानकारी।

    ReplyDelete
  3. বেশ পড়াশোনা করা ভদ্র, শিক্ষিত বাঁদর মনে হচ্ছে দেখে।

    ReplyDelete